Views: 0
ইসলামী ঐতিহ্যের সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণে সারা বিশ্বেই গড়ে উঠেছে রমজান সংস্কৃতি, যা একই সঙ্গে স্থানীয় ও ইসলামী। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এমন কিছু প্রথা ও রীতি অবলম্বন করা হয়, যা সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। এর কোনো কোনোটির সঙ্গে আবার ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দূরতম সম্পর্ক নেই। আলজাজিরার ধারাবাহিক আয়োজন ‘গারায়িবু রামাদানিয়্যাহ’ অবলম্বনে এমন কিছু রীতি-নীতি তুলে ধরেছেন আবরার আবদুল্লাহ।
১. মাথা মুণ্ডানো : মৌরিতানিয়ার মুসলিমরা রমজানের এক-দুই দিন আগে মাথার চুল মুণ্ডন করেন। তাদের ধারণা, রমজানে যে নতুন চুল উঠবে তা বরকত বয়ে আনবে। সাধারণত ঘরের বৃদ্ধ নারীরা শিশুদের মাথার চুল ফেলে দেন। তবে এখন অনেকেই সেলুনে গিয়েও চুল ফেলেন। শিশুদের পাশাপাশি বড়দের চুল মুণ্ডন বা ছোট করতে দেখা যায়। ধারণা করা হয়, হজ ও ওমরার পর চুল ফেলে দেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, তা থেকেই এটা গ্রহণ করা হয়েছে।
২. পোশাক ও থলে সেলাই : ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা ২৭ রোজার দিন স্থানীয় মসজিদে সমবেত হয় এবং তারা জোহর থেকে আসরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে ‘লিবাসে মুরাদ’ (ইচ্ছাপূরণের পোশাক) ও ‘আকয়াসুল বারাকাহ’ (বরকতের থলে) সেলাই করে। তারা বিশ্বাস করে লিবাসে মুরাদ পরলে বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ে হয়, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করে এবং অভাবী ব্যক্তির অভাব দূর হয়। আর আকয়াসুল বারাকাতে অর্থ সংরক্ষণ করলে আয়-উপার্জনে বরকত হয়। ইসলামী শরিয়তে এই প্রথার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না।
৩. ডিম যুদ্ধ : রমজানে পাকিস্তানি তরুণদের একটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ডিম যুদ্ধ। রঙিন ও সিদ্ধ দুটি ডিম নেয় দুই তরুণ। এরপর একজনের ডিমে অপরজন আঘাত করে। যার ডিম ভেঙে যাবে সে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়বে। টিকে যাওয়া তরুণ অপরজনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সন্ধ্যারাতে শুরু হয়ে এই যুদ্ধ চলে ভোররাত পর্যন্ত। বলা হয় রমজানের রাতে জেগে থাকতেই এই যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের পেশওয়ারে খেলাটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রমজানে করা হলেও এই রীতির সঙ্গে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।
৪. কবর জিয়ারত করা : ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা কবর জিয়ারতের মাধ্যমে রমজান মাসকে স্বাগত জানায়। রমজানের চাঁদ ওঠার পর তারা দলবদ্ধভাবে আপনজন ও নিকটাত্মীয়দের কবর জিয়ারতে বের হয়। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও কবরবাসীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে। পথে তারা অভাবী মানুষকে দান করে। স্থানীয়রা এই যাত্রাকে ‘জিয়ারতে কুবরা’ (বড় সাক্ষাৎ) বলে। এ ছাড়া তারা বাহ্যিক ও আত্মিক পবিত্রতার নিয়তে নদীতে বা লেবু পানিতে গোসল করে।
৫. পথিকদের জন্য ইফতার আয়োজন : পথিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা সুদানের মুসলিম ঐতিহ্য। সুদানিজ মুসলিমরা মাগরিবের নামাজের আগে রাস্তার ধারে দস্তরখান বিছিয়ে ইফতার আয়োজন করে। এরপর পথিকদের থামিয়ে থামিয়ে ইফতারের আমন্ত্রণ জানায়। এ ছাড়া ইফতারের আগমুহূর্তে অনেককে ইফতারসামগ্রী নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়। পথিকদের জন্য আয়োজিত ইফতারে স্থানীয়রা নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে অংশ নেয়।
৬. অমুসলিমদের রোজা :ব্রুনেইয়ের অমুসলিমরা মুসলমানের সম্মানে রমজান মাসকে স্বাগত জানায় এবং রোজা রাখে। দেশটিতে প্রথম রমজানে সরকারি ছুটি থাকে। রমজানে সুলতান হাসান বলখিয়া নিজে জাতীয় মসজিদে উপস্থিত হন এবং মুসল্লিদের জন্য সাহরি প্রস্তুতির কাজে অংশ নেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে মসজিদে দ্বিনি আলোচনার আয়োজন করা হয়।
৭. স্ত্রীকে মৃদুপ্রহার : এক কোটি মুসলমানের দেশ উগান্ডা। উগান্ডার লাঙ্গো সম্প্রদায়ের লোকেরা ইফতারের আগে স্ত্রীর মাথায় লাঠি দিয়ে হালকা প্রহার করে। যেন তারা ইফতার আয়োজনে বিলম্ব বা অলসতা না করে। আর তা করা হয় হাসির ছলেই। তবে অনেকের মতে, এটা লাঙ্গো সম্প্রদায়ের ইসলামপূর্ব সংস্কার। যার সঙ্গে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।
তথ্য ও ছবি : আলজাজিরা ডটনেট