মো. হাছান : বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মানের ঘাটতি থাকলেও দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশের একমাত্র বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান না পাওয়ার অন্যতম কারণ গবেষণা, শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার ও আবাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধার অভাব।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের যখন এই অবস্থা তখন দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কী অবস্থা সেটা একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে বর্তমানে ৬০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তারমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ দ্বারা বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ২-টি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন। দেশের সর্ববৃহত্তম বিদ্যাপীঠ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে প্রায় ২,২৮৩ টি অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়ন করে ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।
দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লেগেই থাকে। ধীরগতির ভর্তি ব্যবস্থা, আবাসন সংকট, নি¤œমানের যাতায়াত ব্যবস্থা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এসব সহনীয় মাত্রায় হোক বা নাহোক সেশনজট এতো মাত্রায় যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর অসহনীয়। এতো সমস্যা থাকার সত্তে¡ও সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান কম গুরুত্ব দিয়ে তারপরেও কেন প্রতিটি জেলায় এতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছে।
গুটি কয়েক স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমস্যা সমাধানের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ। তাদের মধ্যে অন্যতম বশেমুরপ্রবি, পাবিপ্রবি, আরো অন্যান বিশ্ববিদ্যালয়। যখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা, তখন দেশের বৃহৎ শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটু পর্যবেক্ষণ করা দরকার।শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত। অভাব শুধু গুণগত বা মানসম্মত শিক্ষার। শিক্ষার মান বাড়বে শিক্ষকদের গুণে। শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকের ভ‚মিকাই সর্বাধিক অগ্রগণ্য। অভিভাবকদের সচেতন করার দায়িত্বও শিক্ষকদের। শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষককে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষক দরদি মন নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষককেই সমাজের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ও যথাযথ পাঠদান ও শিক্ষাদানের সক্ষমতা, কৌশল ও নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করবে শিক্ষার গুণগত মান ও মানসম্মত শিক্ষা।
যেকোনো দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের নিয়মিত, সুষ্ঠু, উন্নত ও পদ্ধতিগত পাঠদান প্রণিধানযোগ্য। শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত আধুনিক সফল, যথাযথ ও নিয়মিত পাঠদান এবং শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের জন্য বড় পাওনা, বড় প্রাপ্তি আর শিক্ষকদের বড় সন্তুষ্টি, বড় সাফল্য, বড় কৃতিত্ব। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানের ক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা, ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতাই যথেষ্ট। একজন শিক্ষকের জীবনাদর্শ হবে দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য আলোকবর্তিকাস্বরূপ। শিক্ষকদের স্বশাসিত হতে হবে। তাড়িত হতে হবে বিবেক দ্বারা। শিক্ষার্থীদের আত্মোপলব্ধির প্রয়োজনে চমৎকার উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকবে শিক্ষকদের।উচ্চশিক্ষায় প্রথমে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ যেখানে একজন শিক্ষার্থী তার মেধা বিকশিত করার সুযোগ পেয়ে থাকবে। শিক্ষার সেই পরিবেশ গঠনের জন্য শিক্ষা খাতের ওপর ভর্তুকি বাড়াতে হবে, ছাত্র রাজনীতির লাগাম টানতে হবে, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক কারিকুলামে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত করতে হবে। -শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :