কথাটা শুনতেই কেন জানি বিভ্রান্তিকর লাগছে ! তাইনা? কোম্পানীকে ভালবাসার মানুষ তো সাধারণত খুব হাতে গোণা হয়ে থাকে, কিন্তু সেই ভালবাসার রূপ টা যে নেগেটিভ আকার ধারণ করতে পারে তা কি করে হয় ! আমি বাংলাদেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে, খুব কাছে থেকে এই বিষয় টা কে খুব গভীর ভাবে খেয়াল করার পর কিন্তু আজকে এই লিখা লিখতে বসেছি।
আর একটা ব্যাপার ও গভীর ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি যে, এই ভালবাসার মানুষ গুলো কিন্তু অনেকেই জানেন না যে তিনি মূলত কোম্পানীর সুদূরপ্রসারী কত বড় ক্ষতি করছেন। আমার এই লিখা মূলত তাদের চিন্তার রসদ জোগাড়ের জন্য কিছুটা অপচেষ্টা বলতে পারেন। কারণ হল, এই লোক গুলো খুব কট্টরপন্থী মানসিকতার হয়ে থাকেন, এবং এক কলম বেশি বোঝার কারণে আমাদের মত সাধারণ এমপ্লয়ি লেভেলের কথাবার্তায় তাদের খুব একটা বোধোদয় হবেনা বলেই মনে হয়।
এই ভালবাসার মানুষ গুলোর বিশেষ আর একটা গুন্ হল, এনারা কোন এক অজানা কারণে উক্ত কোম্পানীর পুরাতন ও পরীক্ষিত মানুষ হিসেবেই ডেডিকেটেড ভাবে অনেকদিন ধরে কাজ করে থাকেন। তাই টপ ম্যানেজমেন্ট টিম তাদের প্রতি একটু বেশি দুর্বল থাকেন।
কোম্পানীর খোদ বড় কর্তাগণ তাদের সকল কৃত কর্মের ভিতরে পজিটিভিটি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন। অনেক ব্যাপারে তাই নিশ্চুপ ও থাকেন। পরিণতিতে শুধু মাত্র কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি ও একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার অবাক করা ভালবাসার অতিশয্যের নমুনা গুলো নিম্নরুপঃ
🔹অতিরিক্ত ভালবাসার নমুনা স্বরূপ প্রোডাক্ট ডেলিভারীর সময় খারাপ পণ্য দিয়ে হলে ও যথাসময়ে ডেলিভারীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তার কাছে “যথা সময়ে ডেলিভারী দিতে পারছি তো এত কষ্ট করেই” এই শ্লোগান টাই মুখ্য ব্যাপার। নিবিড় ভাবে খেয়াল করে দেখবেন যে, প্রচন্ড পরিশ্রম করেই কিন্তু কাজটা করছেন তিনি। পরিশ্রমী গোছের এই মানুষ গুলো কিন্তু এই ব্যাপারে সকল সময় ক্রেডিট নেয়ার ব্যাপারটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তাদের একটা বিভ্রান্তি হল, এই যে কাজটা তিনি করে মূলত কোম্পানি কে যে উদ্ধার করছেন এটাই কোম্পানীর প্রতি বিশাল এক ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। বেশি টাকা দিয়ে যে নতুন ম্যানেজার সাহেব কে নিয়োগ দেয়া হল তার ভিতরে তো এই সকল ডেডিকেশন এর লেশ মাত্র নাই। ঘুরেফিরে আবার আমাদের কেই তো এত বোঝা মাথায় নিয়ে কোম্পানির উন্নতি সাধন করতে হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে এই ভালবাসার আতিশয্য শেষমেশ কোম্পানির ইমেজের কতখানি ক্ষতি করছে তার পরিমাপ করার মত জ্ঞান শুন্য নিশ্চয়ই আমরা নই। আমি এই বিভ্রান্ত ভালবাসার কঠোর সমালোচনা করে দেখেছি, টপ ম্যানজেমেন্ট টিমের এই সকল ছোট ব্যাপারে মাথা ঘামানোর তখন সময় থাকেনা। আপনি মাইক্রো ম্যানেজ কিন্তু ঠিকই করবেন কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নতির দিকে ছোট কাজ গুলোকে আমলে নিবেন না। তাই আমি এই লিখার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাব আপনাদের সামান্য বোধোদয় ঘটানোর।
🔹এর পর ভালবাসার চরম আবেগ লক্ষ্য করতে পারবেন উৎপাদন মুখী কারখানার উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রভাবশালী গোষ্ঠীর। এই শ্রেণীটা কোম্পানীকে একটু অধিকতর ভালবাসে বৈকি। কোম্পানীকে টিকিয়ে রেখেছে যেহেতু তারাই তাই একটু আধটু অনিয়ম তো তাদের ন্যায্য অধিকার তুল্য। প্রতিদিন প্রোডাকশনের টার্গেট ফুলফিল করার জন্য ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত পণ্য খারাপ কোয়ালিটি জেনে ও আউটপুট দেখাচ্ছেন। পরের দিন আবার নিজের লাইনের প্রোডাকশনের ক্ষতি করেই আবার ওই খারাপ পণ্য গুলো রিপেয়ার করা, রেক্টিফাই করা। এই কাজ গুলো প্রায়শই আবার ওভারটাইম এর টাকা দিয়ে করানো হয়ে থাকে। আমাদের অনেক কারখানায় এই সকল বিশ্লেষণ ভিত্তিক ডেটা থাকেনা তাই আমরা পার পেয়ে যাচ্ছি। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত ভালবাসার কি আদৌ কোন দরকার আছে ?
🔹কোম্পানীর অর্ডার কমে গেছে তো কি হয়েছে, কোম্পানিকে বাঁচানোর জন্য কিছু নামধারী ভালবাসার মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে লোক ছাঁটাইয়ের প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিল। সকল সময়ে শর্টকাট পরামর্শ প্রদানে এই শ্রেণীর লোকজন খুব সিদ্ধ হস্ত হয়ে থাকে। প্রশ্ন যদি করেন লোক ছাটাই করে ঠিক কত টাকা আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে? উত্তর পাবেন যতটুকু বাঁচানো যাবে ততটুকুই তো উপকার। আজকে এই তৎক্ষণাৎ ও যৎসামান্য উপকার কিন্তু কোম্পানীকে আগামী তিন/চার মাস পরেই তিনগুন হারে গচ্চা দিতে হবে। এই এমপ্লয়িদের বদলে যে নতুন এমপ্লয়ী নিয়োগ দেয়া হবে তাদের পিছনে আবার তিন মাসের পরিশ্রম, প্রশিক্ষণ এবং লার্নিং কার্ভ এর একটা খরচ কিন্তু আপনাকেই টানতে হবে। এবং এমন ও হতে পারে যে তিন মাস প্রশিক্ষিত করে তোলার পরে ও আগের দক্ষতার লেভেলে হয়ত পৌঁছাতে পারছেনা। কোম্পানিকে বাঁচানোর ওই অতি উৎসাহী মানুষের প্রেসক্রিপশনের বিপরীত অবস্থা তখন টের পাওয়া যাবে।
টপ ম্যানেজমেন্ট টীম কে তখন আশ্বস্ত করা হয় যে ওই সময় তো আমাদের হাতে অর্ডার থাকবে, টাকা থাকবে তাই আমরা নতুন টীম গঠন করতে খুব একটা বেগ পেতে হবেনা। আমি হলফ করে বলতে পারি যে, আপনার প্রতিষ্ঠানের বাইরের প্রোডাকশন ফ্লোরের একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলে দেখুন, একজন নতুন এম্পলয়ী কে এই কারখানার সকল কিছুর সাথে খাঁপ খাইয়ে নেয়া কি পরিমাণ কষ্টসাধ্য একটা কাজ। পরিতাপের বিষয় হল এই ডিসিশনের সাথে জড়িত লোকগুলো কখনই কারখানার ভিতরের কাজ গুলো করেনি তাই তাদের মত করেই তারা সকল কিছু চিন্তা করে।
কোম্পানীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা লোকগুলো এই মোক্ষম সময়ে তাদের আর এক প্রকারের স্বার্থ চরিতার্থ করার দারুণ এক সুযোগ পেয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকা তুলনামূলক ভাবে তাদের প্রতি কম আনুগত্য প্রদর্শণ কারী শ্রেণী টা কে এই সময় বের করে দেয়ার পথ টা সহজ হয়ে যায়। পরিণতিতে শুধু মাত্র কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
🔹আর এক প্রকারের ভালবাসার মানুষ আছে, যারা সারাদিন টপ ম্যানজেমেন্ট এর নৈকট্য লাভের জন্য, কান ভারী করা কিছু চটকদার তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন। টপ ম্যানেজমেন্ট টিম যেহেতু সরাসরি অপারেশনের অনেক গুলো কাজে ব্যক্তিগত ভাবে উপস্থিত থাকতে পারেন না, তাই সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত ওই চটকদারী তথ্য গুলোর উপরে তাদের ভরসা করতে খুব কমফোর্টেবল লাগে। কোম্পানীকে ভালবাসা দ্যুতিময় মানুষ টাকে বড্ড বেশি আপন মনে হয়। তাই পরবর্তী আপডেটের জন্য টপ ম্যানেজমেন্ট মহাশয় হোয়াট্সএপে নিজে থেকেই দ্যুতিময় মানুষ টাকে নক করতে থাকেন। কোম্পানীকে ভালবাসা একমাত্র ব্যক্তি টি তখন আরো কিছু মশলা মিশিয়ে তথ্যের ভান্ডার আরো ভারী করে দেন। দিন শেষে ক্ষয় ক্ষতি কিন্তু শুধু উদ্যোক্তা গণের হয়ে থাকে। কারণ ওই ভদ্রলোক যে ফায়দা হাসিলের জন্য কোম্পানী কে এই নেগেটিভ ভালবাসার মায়াজালে জড়িয়ে রেখেছিলেন তার স্বার্থ ঠিকই হাসিল হয়।
🔹ভালোবাসার আতিশয্য প্রকাশের জন্য কোম্পানীর কাজের মানুষ গুলোর পিছনে লেগে থাকা এবং ওই লোকটাকে অপদস্ত করে বের না করা পর্যন্ত তার যেন শান্তি নেই। কিভাবে কাজের মানুষ টার একটা ছোট্ট ভুল কে বের করা যায় এবং উক্ত ভুলকে পুঁজি করে পুরো সমস্যায় জর্জরিত অন্যান্য গুরুতর ব্যাপার গুলোকে কে প্যাচানো যায় এই ব্যাপারে এই মানুষ গুলোর কোন জুড়ি নেই। পুরাতন কর্মী হওয়ার কারণে সাধারণ ভাবেই কোম্পানীর অনেকগুলো নিগূঢ় তথ্য তাদের কাছে থাকে, এই গোপন তথ্যের সাথে মিশানো তার অপদস্ত করার কূটকৌশলের কাছে অবশ্যই কাজের মানুষ টার হেরে যাওয়া স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত কাজের মানুষ গুলো টিকতে পারেন না। পুরাতন মানুষ টি কোম্পানীর প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের আরো অবারিত সুযোগ পেয়ে যান।
আমাদের কর্মক্ষেত্রে কিছু মানুষ আছেন দেখবেন যে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার অবাক করা ভালবাসার আতিশয্য। 🔹অতিরিক্ত ভালবাসার নমুনা স্বরূপ প্রোডাক্ট ডেলিভারীর সময় খারাপ পণ্য দিয়ে হলে ও যথাসময়ে ডেলিভারীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এইটা কিন্তু কোম্পানীর প্রতি বিশাল এক ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু দিনশেষে এই ভালবাসার আতিশয্য শেষমেশ কোম্পানির ইমেজের কতখানি ক্ষতি করছে তার পরিমাপ করার মত জ্ঞান শুন্য নিশ্চয়ই আমরা নই।
🔹প্রতিদিন প্রোডাকশনের টার্গেট ফুলফিলমেন্ট করার জন্য ২০% পণ্য খারাপ কোয়ালিটি জেনে ও আউটপুট দেখাচ্ছে। পরের দিন আবার নিজের লাইনের প্রোডাকশনের ক্ষতি করেই আবার ওই খারাপ পণ্য গুলো রিপেয়ার করা, রেক্টিফাই করা। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
🔹কোম্পানীর অর্ডার কমে গেছে তো কি হয়েছে, কোম্পানিকে বাঁচানোর জন্য কিছু নামধারী ভালবাসার মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে লোক ছাঁটাইয়ের প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিল। প্রশ্ন যদি করেন লোক ছাটাই করে ঠিক কত টাকা আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে? উত্তর পাবেন যতটুকু বাঁচানো যাবে ততটুকুই তো উপকার। আজকে এই তৎক্ষণাৎ ও যৎসামান্য উপকার কিন্তু কোম্পানীকে আগামী তিন/চার মাস পরেই তিনগুন হারে গচ্চা দিতে হবে। এই এমপ্লয়িদের বদলে যে নতুন এমপ্লয়ী নিয়োগ দেয়া হবে তাদের পিছনে আবার তিন মাসের পরিশ্রম, প্রশিক্ষণ এবং লার্নিং এর একটা কার্ভ খরচ কিন্তু আপনাকেই টানতে হবে। কোম্পানিকে বাঁচানোর ওই অতি উৎসাহী মানুষের প্রেসক্রিপশনের বিপরীত অবস্থা তখন টের পাওয়া যাবে।
🔹এর পর ভালবাসার চরম আবেগ লক্ষ্য করতে পারবেন উৎপাদন মুখী কারখানার উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রভাবশালী গোষ্ঠীর। এই শ্রেণীটা কোম্পানীকে একটু অধিকতর ভালবাসে বৈকি। কোম্পানীকে টিকিয়ে রেখেছে যেহেতু তারাই তাই একটু আধটু অনিয়ম তো তাদের ন্যায্য অধিকার তুল্য। প্রতিদিন প্রোডাকশনের টার্গেট ফুলফিল করার জন্য ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত পণ্য খারাপ কোয়ালিটি জেনে ও আউটপুট দেখাচ্ছেন। পরের দিন আবার নিজের লাইনের প্রোডাকশনের ক্ষতি করেই আবার ওই খারাপ পণ্য গুলো রিপেয়ার করা, রেক্টিফাই করা। এই কাজ গুলো প্রায়শই আবার ওভারটাইম এর টাকা দিয়ে করানো হয়ে থাকে। আমাদের অনেক কারখানায় এই সকল বিশ্লেষণ ভিত্তিক ডেটা থাকেনা তাই আমরা পার পেয়ে যাচ্ছি। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত ভালবাসার কি আদৌ কোন দরকার আছে?
আপনার মতামত লিখুন :