Visits: 22

আপনি হয়তো পড়ালেখা শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করছেন। কিন্তু ইন্টারভিউতে ডাক পাচ্ছেন না। আবার ডাক পেলেও ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। আপনার চাকরি না পাবার কারণ কী হতে পারে, সে ব্যাপারে নিজেকে কোন প্রশ্ন করেছেন কি? হয়তো এমন কোন ব্যাপার রয়েছে যা নিয়ে আপনি সেভাবে মাথা ঘামান নি।

আপনি মনে করতে পারেন, “আমি চাকরি পাচ্ছি না, কারণ:

  • তদবিরের জন্য আমার কোন মামা-চাচা নেই।
  • আমি ঘুষ দিই না/দিতে পারছি না।
  • আমার করার মতো চাকরি তেমন নেই।”

আপনার চিন্তাভাবনা এমন হলে এ লেখা কাজে আসবে না। এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক যে, বহু চাকরির বেলায় প্রথম ২টি কারণ ঠিক হলেও হতে পারে। কিন্তু এ সমস্যাগুলোর সহজ কোন সমাধান নেই। আবার এগুলো সবসময় আসল কারণ নয়।

চাকরির বিজ্ঞপ্তি ঠিকভাবে খোঁজা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ – বিভিন্ন পর্যায়ে আপনি কী করছেন, তার উপর চাকরি পাওয়া-না পাওয়া নির্ধারিত হয়। বহু ক্ষেত্রে আপনার মানসিকতাও পরোক্ষভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে এবারের লেখা।

আপনার চাকরি না পাবার কারণ কী হতে পারে?

১. চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আপনি নিজের সিভি বা অ্যাপ্লিকেশন বানান নি।

প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগদাতারা আপনার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও যোগ্যতা আশা করেন। এগুলো শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার সেকশনে লেখা থাকে না। বরং সে চাকরির জন্য যেসব দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়, সে দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পড়লে নিয়োগদাতাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা সম্ভব।

ধরা যাক, কোন একটি কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে লোক নেয়া হচ্ছে। যদি পুরো বিজ্ঞপ্তির কোন জায়গায় মাইক্রোসফট এক্সেলে দক্ষতার কথা লেখা নাও থাকে, নিয়োগদাতা কিন্তু ঠিকই আপনার সিভিতে এর উল্লেখ দেখতে চান।

বর্তমানে সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সিভি আর অ্যাপ্লিকেশন বাছাই করা হয়। চাকরির বিজ্ঞপ্তির সাথে সম্পর্কিত শব্দ বা কীওয়ার্ড দিয়ে নিয়োগদাতারা এ ফিল্টারিংয়ের কাজ করেন। তাই সে বিজ্ঞপ্তির সাথে আপনার সিভি বা অ্যাপ্লিকেশনের সামঞ্জস্য না থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই নিশ্চিতভাবে বাদ পড়বেন।

২. আপনার সিভি বা অ্যাপ্লিকেশনের মান ভালো নয়।

নিজের অজান্তে বা বেখেয়ালে আপনি এমন সিভি বানিয়ে থাকতে পারেন যেখানে –

  • ভুল বানান আর বাক্য লিখেছেন।
  • আপনার কথা গুছিয়ে লিখতে পারেন নি।
  • অপ্রাসঙ্গিক বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তথ্য দিয়ে ফেলেছেন।
  • ফরম্যাট ঠিক নেই।
  • দৃষ্টিকটু ডিজাইন বা লেআউট ব্যবহার করেছেন।

সিভির মাধ্যমে আপনার ব্যাপারে প্রথম ধারণা পান নিয়োগদাতারা। তাই এর মান খারাপ হলে ইন্টারভিউতে ডাক পাবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনবেন।

৩. আপনার সিভি বা অ্যাপ্লিকেশনে এমন কোন তথ্য দিয়েছেন যা আপনি ইন্টারভিউতে প্রমাণ করতে পারেন নি।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথে মিলিয়ে চলনসই একটা সিভি হয়তো বানিয়েছেন আপনি। ইন্টারভিউ দেবার সুযোগও পেলেন। কিন্তু সিভিতে যা কিছু লিখেছেন, তার উপর প্রশ্ন করা হলে বা কোন কাজ দেয়া হলে প্রমাণ দিতে পারবেন কি? না পারলে নিয়োগদাতার আস্থা হারাবেন।

উদাহরণ দেয়া যাক একটা। বহু চাকরিপ্রার্থী সিভির ভাষা দক্ষতা সেকশনে “Good Command of English” লিখে থাকেন। আপনিও লিখেছেন। নিয়োগদাতা যদি পুরো ইন্টারভিউ ইংরেজিতে নেন আর আপনি উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে কিন্তু ধরা খেয়ে যাবেন।

৪. আপনার ইন্টারভিউ প্রস্তুতি ভালো নয়।

ভালো প্রস্তুতি না নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গেলে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন:

  • ইন্টারভিউর সময় নার্ভাস হয়ে পড়া।
  • জানা প্রশ্নের উত্তর গোছানোভাবে দিতে না পারা।
  • যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা।
  • আপনার দেয়া কোন উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারা।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাথে নিতে ভুলে যাওয়া বা দেরিতে উপস্থিত হওয়া।

খারাপ প্রস্তুতি নিয়ে কোন ইন্টারভিউতে চমৎকার পারফরম্যান্স করা প্রায় অসম্ভব।

৫. চাকরির জন্য দরকারি জ্ঞান ও স্কিল নেই আপনার।

যে চাকরির জন্য আপনি চেষ্টা করছেন, তা পাবার যোগ্যতা কি আদৌ আছে আপনার?

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সার্টিফিকেটের সৌজন্যে কি চাকরিটা পেতে পারেন?

এ চাকরির জন্য ঠিক কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন আপনি? কোর্স বা ট্রেনিং করেছেন? সে কোর্স বা ট্রেনিং থেকে ভালোভাবে কাজ শিখতে পেরেছেন?

প্রশ্নগুলোর খোলামেলা উত্তর নিজেকে দেয়া বেশ কঠিন। কারণ, আমরা নিজেদের জ্ঞান আর দক্ষতার অভাবের কথা স্বীকার করতে চাই না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়তো জানিও না।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে সার্টিফিকেটধারী চাকরিপ্রার্থীর অভাব নেই। কিন্তু দক্ষতাসম্পন্ন লোক পেতে এখনো হিমশিম খেতে হয় নিয়োগদাতাদের। আপনি যদি নামকাওয়াস্তে ডিগ্রি – সেটা অনার্স হোক বা মাস্টার্স হোক – নিয়ে মনে করেন যে, চাকরিটা আপনারই পাওয়া উচিত, তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন ও পড়বেন।

৬. আপনি নিজেই জানেন না কোন ধরনের চাকরি করতে চান।

“আমার যেকোন চাকরি হলেই হবে।”

বহু চাকরিপ্রার্থী এমন চিন্তা করে থাকেন। ফলে একের পর এক চাকরিতে আবেদন করার ক্লান্তিই বাড়তে থাকে। অবস্থার উন্নতি হয় না।

একবারও চিন্তা করে দেখেছেন কি?

  • আপনি কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান বা কোন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মোটামুটি ধারণা রাখেন?
  • আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের কোন বিভাগে কাজ করতে চান?
  • ন্যূনতম কত বেতন পেলে আপনি নিজের বা সংসারের খরচ চালাতে পারবেন?

কমপক্ষে এ তিনটা প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছে না থাকলে আপনিও “আমার যেকোন চাকরি হলেই চলবে” চিন্তার ফাঁদে পড়েছেন। ফলে বুঝতে পারছেন না –

  • কোন ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি আপনার খুঁজে দেখা দরকার।
  • কোন ধরনের দক্ষতা বাড়ানো উচিত।
  • ভালো পরামর্শের জন্য কার কাছে যাওয়া যায়।

৭. আপনি বছরের পর বছর ধরে শুধু সরকারি চাকরির পেছনে লেগে আছেন বা ছিলেন।

আপনাকে দোষ দেয়া যাবে না এ ব্যাপারে। আয়, সম্মান, নিরাপত্তা আর বাড়তি সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় সরকারি চাকরি নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চাকরির ক্যাটাগরিতে পড়ে, বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডারের চাকরি। তাই আপনিও হয়তো এর পেছনে সময় দিচ্ছেন। গাইডের পর গাইড মুখস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

কঠিন সত্য হলো, সবার সরকারি চাকরি হয় না। বিসিএস ক্যাডার হিসাবে উত্তীর্ণ হন গুটিকয়েক মানুষ। তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে আপনি অন্য সুযোগ নষ্ট করছেন না তো?

আপনার চারপাশে সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে কিন্তু বেসরকারি পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি। ব্যবসা করে সফল হওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এমনকি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকে ভালো উপার্জন করেন। তাদের কারো জীবন কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় নি।

সরকারি চাকরি পাবার জন্য ধৈর্য রাখতে পারা ভালো। কিন্তু বয়স ৩০ পার হবার পর সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কোন যোগ্যতা দেখাতে না পারলে বেসরকারি চাকরির রাস্তাও ছোট হয়ে আসবে আপনার জন্য। সূত্র: careerki

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *