প্রথমে জেনে নেই কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?
সূক্ষ পরিকল্পনা ও সৃজনশীলতার, মাধ্যমে একটি বিষয়বস্তু বা কন্টেন্ট তৈরি করে তা টার্গেট কাস্টমারদের কাছে প্রমোশন করার নামই হলো কণ্টেন্ট মার্কেটিং। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছে কন্টেন্ট । কেননা, ভাল কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব না হলে, শুধু প্রমোশন করে কাস্টমার রিচ করা সম্ভব হবে না। কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু যদি প্রাসঙ্গিক না হয় তবে কোন মিডিয়াতেই মার্কেটিং ফলপ্রসূ হবে না। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ওয়েবসাইট, ইউটিউব সব যায়গাতেই এখন কন্টেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ন মার্কেটিং এর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
আপনি যেকোনো প্রমোশনই করেন না কেন সবকিছুতে কন্টেন্ট লাগবেই। আপনি কাস্টমারদের ই-মেইল করবেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিবেন বা ব্লগে আর্টিকেল লিখবেন অবশ্যই সুন্দর একটি কন্টেন্টের প্রয়োজন হবে এবং এটির মার্কেটিং করতে হবে। মানুষ এখন এড পছন্দ করে না, অনেকেই আবার এড ব্লকার সফটওয়্যার ব্যবহার করে। যারা এড ব্লকার ব্যবহার করে না তারাও কিন্তু এডে ক্লিক করে না। ফলে এড দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট না করে কন্টেন্ট দিয়ে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করাই কন্টেন্ট বিপণন বা মার্কেটিং এর মূলকথা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাণ বলা যায় কন্টেন্টকে।
কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি ও মার্কেটিং এর কৌশল
সব প্রতিষ্ঠানই কন্টেন্ট ব্যবহার করে কিন্তু কার কন্টেন্ট মার্কেটে জনপ্রিয়তা পাবে বা অডিয়েন্সের প্রয়োজন পূরণ করবে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত কন্টেন্ট বিপনন বা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
অডিয়েন্সের পছন্দ অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করা,
অডিয়েন্স কি ধরণের কন্টেন্ট পছন্দ করে, কোন ধরনের কন্টেন্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি শেয়ার হয়, অডিয়েন্স কোন ধরণের কন্টেন্টের প্রত্যাশা করে সে অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
রেফারেন্সসহ তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করা,
যেকোন কন্টেন্ট তৈরি করতে হলে সেখানে রেফারেন্স বা তথ্যসূত্র ব্যবহার করলে অডিয়েন্সের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে কন্টেন্টটি তথ্যবহুল, নির্ভুল ও রেফারেন্সযুক্ত হতে হবে।
কন্টেন্ট রিসার্চ করে তৈরি করা,
একটা বাস্তব সত্য কথা হচ্ছে পৃথিবীর বেশিরভাগ কন্টেন্টই লিখা হয়ে গেছে। যেমন আপনি যে শব্দ লিখেই গুগলে সার্চ করেন না কেন আপনি কন্টেন্ট পাবেন। সুতরাং এখন প্রয়োজন হবে –
ওয়েব এনালাইটিক্স ব্যবহার করা
ভাল মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে হলে অবশ্যই ওয়েব এনালাইটিক্স ব্যবহার করতে হবে, হতে পারে তা Google Analytics বা Facebook Analytics. এক্ষেত্রে বুঝা যাবে কোন কন্টেন্টের রিচ বেশি বা ওডিয়েন্সের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।
কন্টেন্ট চ্যানেল সিলেক্ট করা
বিভিন্ন ধরনের চ্যানেলের জন্য আলাদা আলাদা কন্টেন্ট মার্কেটিং করা উচিত। অডিয়েন্সের চাহিদা, সময়, আগ্রহ, বয়স, অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা করে টার্গেট অডিয়েন্সকে তার ব্যবহৃত চ্যানেলে মার্কেটিং করতে হবে।
এসিও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট তৈরি
সার্চ ইঞ্জনে কেউ সার্চ করলে যদি আপনার কন্টেন্টকে খুঁজে না পায় তবে কন্টেন্ট তৈরি করা অর্থহীন হয়ে যাবে। তাই আপনার কন্টেন্টকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। বিস্তারির জানুন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইউটিউব থেকে।
মানসম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি,
কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি,
নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করতে হবে, সেক্ষেত্রে একটা শিডিউল করে রাখা যেতে পারে, সপ্তাহে কয়টি কন্টেন্ট কোন সময়ে কে পাবলিশ করবে। অনেক্ষেত্রে দেখা যায় কখনো নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ হয় আবার কখনো দীর্ঘদিন কন্টেন্ট পাবলিশ হয়। কন্টেন্ট পাবলিশের মধ্যে যেন ধারাবাহিকতা থাকে সেজন্য কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে।
মার্কেট সেগমেন্ট (বিভক্তিকরণ) করা
পেশা, অবস্থান, বয়স, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন বাচ্চাদের জন্য যে কন্টেন্ট সেটি অবশ্যই বয়স্কদের জন্য মানানসই হবে না।
কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি ও মার্কেটিং এর প্রকারভেদ
সব ধরণের কোম্পানির জন্য কন্টেন্ট এর মার্কেটিং একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভাল মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে প্রয়োজন প্রচুর মেধাশ্রম। এখন প্রশ্ন আসে কি করে কন্টেন্ট এর মার্কেটিং এ সফল হওয়া যায় আর সফল হতে হলে কোন কোন মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত। তাই আমরা আলোচনা করবো কন্টেন্ট মার্কেটিং এর প্রকারভেদ নিয়ে।
বিভিন্ন চ্যানেলে বিভন্ন ধরণের কন্টেন্ট নিয়ে মার্কেটিং করা যার। সেক্ষত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার ভিজিটর কোন কোন প্ল্যাটফর্মে বেশি ভিজিট করে। এখন আমরা বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট বিপনন বা মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করবো। অনালাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন স্থানে কন্টেন্ট ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
বিশ্বের প্রায় ৩৭০ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, হতে পারে তা ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্টে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, ফেসবুকে ভাইরাল কন্টেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ফেসবুক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ভিজিটরদের শিক্ষা, সচেতন করা, আনন্দ দেয়া, নিউজ শেয়ার করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট ব্যবহৃত হয়। সব বয়সী সব ধরণের মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করে। কিন্ত টুইটারে ছোট ছোট টুইট বেশি ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে আনন্দ দান ও অল্প কথার ব্যপকতা প্রকাশ পায়। অপরদিকে লিঙ্কডইন হচ্ছে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক যেখানে শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগের চেয়ে পেশাগত যোগাযোগই প্রাধান্য পায়।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে একেক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার একেক ধরণের অডিয়েন্স থাকে ফলে প্রত্যেকটি কন্টেন্ট সে অনুযাগী অডিয়েন্সের নিকট পৌঁছাতে হবে। প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করার আগে সেই সোশ্যাল মিডিয়ার অডিয়েন্সদের আচরণ বুঝতে হবে। এজন্য কন্টেন্ট প্রস্তুতকারকে অবশ্যই বেসিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জানতে হবে।
ব্লগ কন্টেন্ট,
কাস্টমারদের কাছে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার জন্য ব্লগ কন্টেন্ট এর বিকল্প নেই। ব্লগ পোস্টগুলো এমন হওয়া উচিত যেন ভিজিটরা শিক্ষামূলক, জ্ঞানমূলক, প্রোডাক্ট সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি পেয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে ব্লগ এমন একটা প্লাটফর্ম যা পাঠক থেকে কাস্টমারে পরিনত করতে পারে। ব্লগের মাধ্যমে একটি কোম্পানির কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক জোরদার হয় ও ব্র্যান্ডভ্যালু বৃদ্ধি পায়।
ব্লগে কন্টেন্ট প্রকাশ করার পর তা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অন্য ব্লগের সাথে লিংকিং করে ও সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার করে ব্লগের কন্টেন্ট মার্কেটিং করা হয়ে থাকে।
ভিডিও কন্টেন্ট,
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমান সময়ে মানুষ ব্লগ পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি আগ্রহী। অন্যান্য সকল মাধ্যম হতে ভিডিও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও সহজতর অডিয়েন্সের কাছে। দীর্ঘসময় ধরে আর্টিকেল পড়ার চেয়ে ভিডিও কন্টেন্ট সল্প সময়ে অধিকতর বেশি ফলপ্রসূ তথ্য প্রদান করতে পারে। ইউটিউবে প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘন্টা ভিডিও দেখা হয়, ফলে অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করতে ভিডিও কন্টেন্ট মার্কেটিং এর বিকল্প নেই।
ই-মেইল ট্যামপ্লেট,
ই-মেইলের মাধ্যমে কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ই-মেইল ট্যামপ্লেট ব্যবহার করতে হবে। ই-মেইল ট্যামপ্লেটে সংক্ষেপে কাস্টমারদের পণ্য বা সেবা গ্রহণের আহবান জানানো হয়। ই-মেইল ট্যামপ্লেটে টার্গেট কাস্টমারদের বিভিন্ন অফার, ফিচার, আপডেট ইত্যাদি জানানো হয়।
ইনফোগ্রাফিক্স,
ইনফোগ্রাফিক্স কেবলমাত্র শব্দের চেয়ে ডেটা আরও চিত্র জোরালোভাবে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারে। ট্যাবল, চার্ট, গ্রাফ ইত্যাদি হলো ইনফগ্রাফিক্সের উদাহরণ। অডিয়েন্সকে সংক্ষেপে পুরো বিষয়বস্তু বুঝাতে ইনফোগ্রাফিক্সের বিকল্প নেই।
পরিশেষে বলতে পারি,
কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু মার্কেটিং একটা বিশাল অধ্যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল উপজীব্য বিষয় এখন কন্টেন্ট। আমরা চেস্টা করেছি কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মূল কথাগুলো তুলে ধরার। আপনার যেকোন প্রশ্ন না মূল্যবান মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন। উত্তর দেওয়ার চেস্টা করবো। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
আপনার মতামত লিখুন :