Visits: 10

অ তে- অজগর, আ তে-আম, ই তে-ইঁদুর, ঈ তে-ঈগল। বর্ণ পরিচয়ের এই পরিচিতিই শাশ্বত পরিচিত বাঙালির কাছে। ৯ নামক বর্ণটা যখন বিদায় নিলো, বাংলা একাডেমি যখন গরু কে গোরু করল, ‘ী’- কার এর বিলুপ্তি ঘটল তখন বাঙালির কপালে প্রশ্নের ভাঁজ খুব একটা প্রকট হয়নি।

তার পেছনে কারণ হলো বাংলা একাডেমি বানান সংশোধনের এই ব্যাপারগুলোর যুক্তিসংগত বিশ্লেষণ করেছে। তবে ঈদ শব্দটির বানান ইদ হওয়ার পর বাঙালি কপালের চিন্তাভাঁজ গাঢ় হয়ে গেছে।

কারণটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা এটি অভ্যস্ততা ও ধর্মীয় উৎসববিষয়ক শব্দ। তবে বানানপ্রণেতা প্রতিষ্ঠানের দায়ও এখানে কম নয় । যুক্তি দিয়ে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা তাদের দায়িত্ব।

তবে বিষয়টা এখন গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল বিষয়ের মতো হয়ে গেছে। কারণ ইদ লেখার জন্য ‘ই’ বর্ণটাকে কেউ মানে না ।

অবশ্য আদি বাংলা অভিধানে ইদ, ওজু, নামাজ শব্দগুলোর বানান এমনই ছিল। তবে ১৮১৭ সালে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ রচিত বাংলা ভাষায় বাংলা থেকে বাংলা প্রথম অভিধান সংকলন (বঙ্গ ভাষাভিধান) গ্রন্থটির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।

সেখানে বর্তমান বাংলা একাডেমি প্রণিত বানানগুলো (ইদ, ওজু, নামাজ) দৃশ্যমান। উপমহাদেশে প্রচলিত ইসলাম সম্পর্কিত বানানগুলোর পরিবর্তন আসে ব্রিটিশ শাসনামলে। ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত আন্দোলন ফরায়েজি আন্দোলনের সময়কাল থেকে শব্দের বানানে পরিবর্তন শুরু হয়।

বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় বিপর্যযয়ের প্রেক্ষিকে, ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পালনের ব্যাপারে মুসলমানদের আহ্বান করে হাজী শরীয়ত উল্ল্যাহর নেতৃত্বে এই আন্দোলন সামাজিক আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়।

হাজী শরীয়ত উল্ল্যাহ মাওলানা বাসারাত আলীর সঙ্গে মক্কা গমন করেন এবং ইসলামি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করে, ওয়াহাবি আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেন। তিনি সৈয়দ আহমদ বেরলভির শিষ্য ছিলেন।

ফরজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন থেকে ইসলামে ব্যবহৃত শব্দগুলো বাংলা উচ্চারণের বদলে আরবি উচ্চারণের আদলে সংস্কার আনা হয়। যার ফলে ইদ হয়ে যায় ঈদ, রোজা হয় রোযা, নামাজ হয় নামায।

অথচ বাংলা ভাষা উচ্চারণনির্ভর কাজেই আমরা ঈদ লিখলেও বলছি ইদ। এক আলিফ টান দিয়ে ঈদ বলছি না। গোলমাল আরও আছে , ঔপোনিবেশ শাসন আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আধুনিকতার ছোঁয়া পায় এ কথা অনস্বীকার্য।

তবে নিজেদের মুনশিয়ানা প্রমাণ করতে আদি বাংলা ভাষার অনেক বিষয়কেই অস্বীকার করা হয়েছে।
যেমন প্রথম সুবৃহৎ বাংলা অভিধানের রচয়িতা হিসেবে হেনরি পিটস ফরস্টারের নাম সবার কাছে পরিচিত। পিটস বাবু তার রচনা কালের বেশিদূর পর্যন্ত দৌড়াতে চাননি।

তাই রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ রচিত ‘বঙ্গ ভাষাভিধান’ বইটির খবর আর কেউ নেওয়ার চেষ্টা করেননি। তৎকলীন সময়ে প্রচলিত ঈদ, ওযু, নামায শব্দগুলোই স্থান পেয়েছে হেনরি পিটস ফরস্টারের অভিধানে। ফলস্বরূপ বাঙালি এগুলোকেই নিজস্ব ভেবে চর্চা করে এসেছে। তাই এখন ‘ঈদ’না লিখলে ইদটা জমে না।

লেখক: জাওয়াদ অন্তু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *