Visits: 6

জিবলু রহমান:: পাহাড় প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। পাহাড় প্রকৃতির মাঝে তার নান্দনিক সৌন্দর্য মেলে ধরে মানুষের নয়ন ও মনকেও স্বার্থক করে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল পার্বত্য অঞ্চল। পাহাড়ের ওপর এখন যথেচ্ছাচার হচ্ছে। নির্বিচারে সকলেই ক্ষতি করে চলেছে পাহাড়ের। বৈরী আবহাওয়ায় সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যে-সব এলাকায় পাহাড়ের অবস্থান বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা এ তালিকার মধ্যেই। অতিরিক্ত পরিমাণে যখন বৃষ্টি হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিধ্বসে বহু প্রাণহানি ও রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের জন্য দায়ী পাহাড় কাটা, বনভূমি উজাড় করা আর পাহাড় নিয়ে অর্থব্যবসায় জড়িতরা। প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর এই অবৈধ কাজ করে শত শত মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে। তাদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসনের কিছু লোকের দিকে আঙ্গুল তুলে সংবাদপত্রের খবর প্রকাশ অনেক পুরাতন ঘটনা।
২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন ভোর থেকেই টানা বৃষ্টি শুরু হয়। এই দু’দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩০০ মিমি ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে একই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ২২২ মিমি। টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন, বান্দরবানে ৯ জন এবং চট্টগ্রামে ৩০ জন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারি হয়ে রাঙামাটি পর্যন্ত পাহাড় কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ওয়াল দেয়া দরকার ছিল। তা দেয়া হয়নি। সে কারণে বৃষ্টিতে মাটি খসে পড়েছে।
এ সময় পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাহাড় ধসে ১০ বছরে ৬ সেনা সদস্যসহ ৩ শতাধিক মানুষ প্র্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড় ধসের এই ঘটনা ঘটতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে। পাহাড় ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি প্রথম ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। টানা বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পাহাড়তলি, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলশী এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৭ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। ২০০৮ সালে বান্দরবান শহরের বালুচরা এলাকায় পাহাড় ধসে ১৩০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
জুনে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবানে ঘটে যাওয়া পাহাড়/ভূমি ধ্বসের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক ঘটনার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়ে বলেন, এবার পাহাড়ে ঘটে যাওয়া ভূমি ধ্বসের মূল কারণ অত্যধিক ভারী বর্ষণ এবং পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি পাহাড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি উজাড়কে দায়ী করেন।
২০০৭ সালের পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকার জানতে ১১ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি প্রতিবেদন দিলেও কমিটির সুপারিশ কাজে লাগানো হয়নি। কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি, পাহাড় ধসের কারণ প্রাকৃতিকের চেয়ে মানুষেরই সৃষ্টি বেশি। পাহাড় কেটে ফেলা, গাছপালা কেটে ফেলা, পাহাড় লিজ দেয়া, পাহাড়ে সেটেলারদের বসতি, পাহাড়কে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা অন্যতম কারণ।’
তিনি জানান, ‘আমরা পাহাড় ধস রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। এরমধ্যে প্রধান সুপারিশ ছিল পাহাড় লিজ দেয়া বন্ধ করা। পাহাড়ের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করা। পাহাড় কেটে হাউজিং, শিল্পস্থাপন পাহাড়ের বড় ক্ষতি করে। পাহাড়ে ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়া আরেকটি ক্ষতি। আর আমরা অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধেরও সুপারিশ করেছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাহাড়ের বন উজার করা হয়েছে। গাছ না থাকলে পাহাড় টিকবে কী করে। তাই আমরা পাহাড়ে দ্রুত বনায়নের প্রস্তাব করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘বন উজাড় এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে অবৈধভাবে। যারা এসব করছেন, তারা প্রভাবশালী। তাদের সঙ্গে আছেন প্রশাসনের অসাধু কিছু লোক।’
সামারি চাকমা পাহাড়ে বেড়ে ওঠা খাগড়াছড়িতে আইন পেশায় নিয়োজিত সামারি চাকমা বলেছেন, ‘পাহাড়ে এখন আর বড় কোনো গাছ নাই। সব ন্যাড়া পাহাড়। আমাদের ছোটো বেলায় আলুটিলায় অনেক গাছ দেখেছি। কিন্তু সব উজাড় হয়ে গেছে। তাই পাহাড় আর তার মাটি ধরে রাখতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের মাটিও নিয়ে যাওয়া হয়, পাহাড়ে নানা বাণিজ্যিক কাজ হয়। ফলে পাহাড় তার নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়েছে। আমরা কথা বলেও কোনো ফল পাইনি।’
সাংবাদিক এবং মাউন্টেনিয়ার (ট্র্যাকার) শাকিল হাসান বলেছেন, ‘পাহাড় ধসের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আশির দশকের শুরুতে পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক হারে অন্য এলাকা থেকে এনে বাঙালিদের বসতি স্থাপন করা। যেহেতু পুরো এলাকাটি পাহাড়ি, তাই সেগুলো কেটেই বসতি নির্মান করা হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, ‘গত ১৫ বছরে (২০১৭ সালে দেওয়া মতামত) বগা লেক, থানচি, আলীকদম, সাজেক, বাঘাইছড়ির মতো দুর্গম এলাকাতেও পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই কষ্টসাধ্য কাজটি করেছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, দেশের পাহাড়ের ভূমিবিন্যাস, মাটি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় ঘাটতি ছিল। আর পার্বত্য এলাকায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি। ষাটের দশকে দেয়া বাঁধের ফলে রাঙামাটির বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যা ওই এলাকার ভূমি বিন্যাস, মাটির উপর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।’
তাঁর মতে, ‘ব্যাপকহারে গাছ কাটার ফলে পার্বত্য এলাকা অদ্ভুত ন্যাড়া চেহারা নিয়েছে। তবে পাহাড়গুলো সবুজ দেখায় প্রচুর বৃষ্টির কারণে লতা গুল্ম আর ছোট প্রজাতির গাছ জন্মায় বলে। কিন্তু এসবের শেকড় মাটির খুব গভীরে যায় না। বড়ো গাছের শেকড় যেমন গভীরে গিয়ে মাটিকে আকড়ে থাকে। তো বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে মাটির শক্তি কমে যাচ্ছে। ভূমি ধসের এটাও বড় কারণ।’ (সূত্র : ‘পাহাড়খেকোদের’ কারণেই ধস আর মৃত্যুর মিছিল, হারুন উর রশীদ স্বপন, অনলাইন সংবাদপত্র-ডয়চে ভেল ১৪ জুন ২০১৭)
পাহাড়ের জীবনযাপন ও প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি রাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের শিক্ষক অধ্যাপক দানেশ মিয়া পাহড়ধস ঠেকাতে শূন্যের কাছাকাছি চলে যাওয়া প্রাকৃতিক বনকে ফিরিয়ে আনার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি মনে করেন, টানা ১০ বছর কোনোভাবে বিরক্ত না করলে এই বন ফিরে আসতে পারে। বাংলাদেশের পাহাড় ধসের কারণ সম্পর্কে সংবাদপত্র জানতে চাইলে প্রথমেই তিনি এখানকার বর্তমান জন-মানচিত্র ও জীবন-যাপনের দিকে দৃষ্টি দেন। তিনি বলেন, আশির দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমতলের মানুষদের নেয়া হয়েছে। তাদের জনসংখ্যা বেড়ে অনেক হয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংখ্যা ট্রাইবাল কমিউনিটিজকে ছাড়িয়ে গেছে।
‘থাকা ও খাওয়ার জন্য সেখানে তাদেরকে কৃষি কাজ করতে হয়। ঘরবাড়ি বানাতে হয়। তারা সেটা পাহাড় কেটে করেন। পাহাড়িরা এখানে হাজার হাজার বছর ধরে থাকে। তাঁরা জানেন, কীভাবে পাহাড়কে ক্ষতি না করে কৃষি কাজ করতে হয়। কীভাবে পাহাড়কে ক্ষতি না করে ঘর বানাতে হয়।’
‘আমাদের সমতলের মানুষদের কিন্তু সেই জ্ঞান নাই। তাঁরা সেখানে সমতলের মতো করে ঘর বানাচ্ছে। পাহাড়কে কেটেকুটে সাবাড় করছে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে পাহাড়কে আঘাত করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে চলে আসছে, যাতে বড়ো ধরনের বিপর্যয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলতাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে ‘বায়ো ডাইভার্সিটি হটস্পট এরিয়া’। এখানে দীর্ঘ দিনের পুরনো প্রাকৃতিক বন ছিল। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক বন একবারে শূন্যের কাছাকাছি।
‘এখানে ৯০’র দশকের পর অনেক প্ল্যান্টেশন হয়েছে। বনের কাভারেজ বেড়েছে। কিন্তু কোয়ালিটিটিভ বনায়ন হয়নি। খেয়াল করবেন, সেখানে বনায়নে মূলত বিদেশী বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে।’
‘যেমন, সেগুন। প্রাকৃতিক বন কেটে এটা লাগানো হয়েছে। প্রাকৃতিক বনে মাটি ধারণের ক্ষমতা ছিল, সেটা এখন আর নেই। এই গাছের নীচে ঝোপও হতে চায় না। সেগুনের পাতা খুব অ্যাসিডিক থাকে।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সে জন্য এখন প্রস্তুতি নেয়া দরকার। তিনি জানান, এ সব বিষয়কে ডিল করতে পরিবেশ বিভাগ, আবহাওয়া বিভাগ, পার্বত্য প্রশাসনের কোনো পরিকল্পনা নাই। থাকলে জীবনক্ষয় কমানো যেত।
তিনি বলেন, আমাদের পাহাড়গুলো বেলে দোঁয়াশ মাটির। এগুলো পাথরের পাহাড় হলে এ ধরনের ধস হতো না। প্রাকৃতিক বন পানিকে ধরে রেখে আস্তে আস্তে সরাতে সাহায্য করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বন থাকলে পানি নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা যেটাকে ‘ওয়াটার কনজার্ভেশন’ বলি। যখন আপনি প্রাকৃতিক বন সরিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়ে দেবেন। তখন সেখানে এই ‘ওয়াটার কনজার্ভেশন’ কাজ করে না।
‘তাতে সব পানি একসাথে মুভ করে। যা বেলে দোআঁশ মাটিকে গলিয়ে নীচের দিকে নিয়ে যায়। যে সব পাহাড় হেলে থাকে বা খাড়া, সেগুলো যদি বেলে দোআঁশ মাটির হয় এবং সেখানে প্রাকৃতিক বন না থাকে, তাহলে সেগুলো বেশি ঝুঁকি থাকে।’
এই সমস্যা সমাধানের পথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে হবে।
পাহাড়ে রাস্তাঘাট বা অন্য উন্নয়নমূলক কাজে পাহাড়কে ডিস্টার্ব না করার চেষ্টা করতে হবে। এরপরও যদি কাটতেই হয়, তাহলে ‘রিটেইনিং ওয়াল’ দিতে হবে।
সেখানে প্রাকৃতিক বনকে উঠে আসার একটা সুযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যথায় কৃত্রিম বন দিয়ে পাহাড়কে ধরে রাখতে পারবেন না।
‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনকে ১০ বছর আনটাচড রেখেছি, এখানে গভীর প্রাকৃতিক বন হয়ে গেছে। আপনি ইচ্ছা করলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে প্রাকৃতিক বনকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের ভূমিধস নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নাই। এটা নিয়ে এ পর্যন্ত কেবল দু’টো কাজ হয়েছে। একটা একান্তই প্রকৌশল বিষয় নিয়ে। আরেকটা হচ্ছে, রেইনফল নিয়ে কক্সবাজারের একটা এলাকায় হয়েছে।
এ কারণে কোনো জায়গাগুলোতে ঝুঁকি আছে-সেটা সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি এর জন্য অর্থায়ন না থাকাকে দায়ী করেন। (সূত্র : ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক বন শূন্যের কাছাকাছি’, সুলাইমান নিলয়, অনলাইন সংবাদপত্র-ডয়চে ভেল ২৬ জুলাই ২০১৭)
কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে? এটা কি শুধুই বৃষ্টিপাতের ফলাফল, নাকি অন্য কারণ আছে-২০১৭ সালের ১৮ জুন দৈনিক প্রথম আলোর আয়োজনে ‘পাহাড়ধস : কেন, কী করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল জোরালোভাবে।
সূচনা বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছিলেন-আমরা মনে করি, এটা শুধু ভারী বৃষ্টির জন্যই হয়নি। কয়েক দশক ধরে বন-পাহাড় ধ্বংস করা, মাটি কাটা, বসতি স্থাপন করা, প্রাকৃতিক গঠনকে বিবেচনায় না নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি করা-এ সবকিছু মিলিয়ে এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেছিলেন-যেখানে পাহাড় আছে, সাধারণত সেখানে ভূমিধস হবে। সেটা আগ্নেয় শিলা, রূপান্তর শিলা বা পাললিক শিলা, যেটাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই পাহাড়ধস হবে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও ভূমিধস হচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ পাহাড় পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। এখানে ভূমিধস বেশি হবে। কয়েক দশক আগেও ভূমিধস হতো। কিন্তু তখন এভাবে মানুষের মৃত্যু হতো না বলে মানুষ এ বিষয়টি জানতে পারত না। বর্তমানে পাহাড়ধস আগের থেকে বেড়ে গেছে। সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ের বিন্যাস হলো উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। আমাদের দেশের পূর্বে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, এরও পূর্বে মিয়ানমারের পাহাড়গুলো একই রকম। এর মধ্যে কিছু পাহাড় উচ্চতা ও কিছু পাহাড় ভ্যালি তৈরি করে।
পাহাড়গুলোর মধ্যে তিন ধরনের ভূতাত্ত্বিক গঠন রয়েছে। এগুলো হলো বালুপ্রধান, স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস (বালু-মাটির স্তরবিশিষ্ট) ও কাদাপ্রধান পাহাড়। স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস পাহাড়গুলো ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্য পাহাড়েও ভূমিধস হতে পারে। আমাদের পাহাড়গুলোর পূর্বে ও পশ্চিমে ঢাল রয়েছে। যেসব পাহাড়ের ঢাল ও এর ভেতরের ভূতাত্ত্বিক স্তর যখন একই দিকে থাকবে, সে পাহাড়গুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার যেসব পাহাড়ের ঢাল ও এর ভূতাত্ত্বিক স্তর বিপরীতমুখী, সেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ।
আমাদের ছাত্রজীবনে ঘন বনায়নের জন্য এসব পাহাড়ে ঢুকতে পারতাম না। এখন সে অবস্থা নেই। বৃষ্টিপাত যে এখন বেশি হচ্ছে, তা নয়। আগেও ভারী বৃষ্টিপাত হতো। কিন্তু তখন ঘন বনায়নের জন্য বৃষ্টিপাত পাহাড়ের শিলাস্তরে ঢুকতে পারত না। বৃষ্টির পানি পাহাড়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিচে চলে আসত। এ জন্য পাহাড়ের ভেতরের মাটির গঠন ঠিক থাকত।
এখন পাহাড় ন্যাড়া হয়ে গেছে। পাহাড়ে ঘন বনায়ন নেই। এ জন্য বৃষ্টির পানি সরাসরি পাহাড়ের শিলাস্তরে প্রবেশ করে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শুধু ভারী বৃষ্টির জন্যই পাহাড়ধস হচ্ছে না। আরও অনেক কারণ রয়েছে।
ভূমিকম্প, পাহাড় কাটা, বন উজাড় করা, প্রতিনিয়ত ভারী যানবাহনের ঝাঁকুনি-এমন বিভিন্ন কারণে পাহাড়ধস হতে পারে। এবার পাহাড়ধসে বেশি মানুষ মৃত্যুর জন্য এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতে হয়তো মৃত্যু কমে যাবে। কিন্তু পাহাড়ধসের প্রকৃত কারণ যদি চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে এ ধরনের মৃত্যু হতে থাকবে।
পাহাড়ধস একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকা- পাহাড়ধসকে ত্বরান্বিত করেছে। এখানে যেকোনো ধরনের নির্মাণের জন্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি। তা না হলে একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা কীভাবে মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পাহাড়ধস এর উদাহরণ।
এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ রাখা যাবে না। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। আমার মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় একটা জরিপ হওয়া উচিত, কোনো কোনো রাস্তাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বল্প মেয়াদে রিটেনশন ওয়াল দিয়ে রাস্তাগুলোকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে বন বিভাগ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন-সবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর খায়রুল ইসলাম বলেছিলেন-পাহাড়ি জনপদের অনেক বিচিত্র নাম আছে। ছড়ি, ছড়া, ঝিরি ইত্যাদি। এ থেকে বোঝা যায়, পাহাড়ি ঝরনার পাশ দিয়ে বসতি গড়ে উঠেছে। আমি পানি নিয়ে কাজ করি। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট অনেক বেশি।
২০০৭ সালে এ এলাকায় আসি। এখানকার ১১টা উপজেলায় ঝরনার গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করলাম। তখন ঝরনাগুলোর খুব খারাপ অবস্থা দেখলাম। ২০১৬ সালে আবার ওখানে গেলাম। অনুসন্ধান করতে চেষ্টা করলাম এসব ঝরনার অবস্থা কী। আমার কাছে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা পার্বত্য অঞ্চলের ছবি আছে।
১৯৮৯ সালে তোলা ছবিতে দেখা যায়, পার্বত্য অঞ্চল ছিল গভীর বনভূমি। ২০০৩ সালে তোলা ছবিতে দেখা যায়, এ অঞ্চলে আগের মতো গাঢ় বন নেই। এটা অনেকটা হালকা বনে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা পার্বত্য অঞ্চলের চিত্রে ভয়ংকর রূপ দেখা যায়। কিছু জায়গা ছাড়া পুরো বনভূমি কেটে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, রাবার বাগান ইত্যাদি করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ইমেজে একে আর বন বলার সুযোগ থাকছে না। বন ধ্বংসের সঙ্গে ভূমিধসের সম্পর্ক আছে কি না, এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
১৯৬৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমরা বৃষ্টির নমুনা দেখেছি। সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমেনি। আগে পাহাড়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিক বন ও লতাগুল্ম ছিল, এ জন্য সহজে পানি নিচে গড়িয়ে যেতে পারত। এখন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হওয়ার কারণে সেটা হতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির পানি পাহাড়ের মাটির ভেতর প্রবেশ করে ভূমিধসের কারণ সৃষ্টি করছে।
ঝরনার স্বচ্ছ পানিকে কাদাপানিতে পরিণত করছে। পাহাড় ভালো অবস্থায় আছে না খারাপ অবস্থায় আছে, এটা বোঝার জন্য দেখতে হবে ঝরনার অবস্থা কেমন। ঝরনা যদি ভালো অবস্থায় থাকে, তাহলে বুঝতে হবে পাহাড়ও ভালো আছে। ঝরনার অবস্থা খারাপ মানে পাহাড়ের অবস্থা খারাপ। বন ধ্বংস করে আমরা পাহাড়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছি। এর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। বন কেটে আড়াআড়ি রাস্তা, বসতি স্থাপন, বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি-এসব পাহাড়ধসের কারণ বলে মনে করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা মোটেই উচিত নয়। এটা পাহাড়কে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
আমেরিকার ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনকে একটা কারণে মানুষ মনে রেখেছে। তিনি আমেরিকার সব বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কেউ বনের কোনো গাছ কাটতে পারে না। এর সুফল এখন আমেরিকা ভোগ করছে। আমাদেরও এমন একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেন বনের কোনো গাছ কাটা না হয়। লিজ দেওয়া না হয়।
পাহাড় রক্ষার অনেক ধরনের উদ্যোগ আছে। আমি মনে করি, পাহাড়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য, ঝরনাগুলো সচল রাখার জন্য ও পাহাড় নিরাপদ রাখার জন্য পাহাড়ের গাছ যেন কাটা না হয় এমন একটা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
সাবেক প্রধান বনরক্ষক ইউনুস আলী বলেছিলেন-পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। দেশে মোট পাহাড়ি বনের ৯ শতাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে। ১৯৬৪-৬৫ সালের এ অঞ্চলের একটা গবেষণা ছিল। এ গবেষণামতে, ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ হলো পাহাড়। ১৯ শতাংশ টিলাভূমি। ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সমভূমি।
একটা পাহাড়ে কমপক্ষে তিন ধরনের গাছের স্তর থাকে। মাটির সঙ্গে থাকে লতাগুল্ম। এগুলো না থাকলে পাহাড়ের গঠন ঠিক থাকে না। গাছের শিকড়ের জন্য পাহাড়ের গঠন ঠিক থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯ লাখ একর হলো সংরক্ষিত বন। প্রাকৃতিক বন বা সংরক্ষিত নয় এমন এলাকার পরিমাণ ১৭ লাখ একর। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এসব এলাকার ৫ থেকে ১০ একর পর্যন্ত বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বন বন্দোবস্ত দেওয়ার ফলে অনেকে এগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেছে।
ব্যক্তি সব সময় মুনাফার বিষয় গুরুত্ব দেয়। তারা এখানে বাণিজ্যিক বনায়ন করেছে। ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত এখানে মূলত ছিল সেগুন, গামারি, কদম ইত্যাদি গাছ। পরবর্তী সময়ে হর্টিকালচার চাষ হয়েছে।
১৯৭৬ সালে আবার চিটাগং হিলট্রাক্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ড হয়। এর মাধ্যমে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন শুরু হয়। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এখনো আছে। এখানে সড়ক যোগাযোগ, টেলিকমিউনিকেশন, বিদ্যুৎ-সংযোগ ইত্যাদি হয়েছে। উন্নয়নের ফলে এ অঞ্চলে মানুষের চাপ বেড়েছে।
১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাঙালি ছিল। ১৯৯১ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এলাকায় ৪ লাখ পাহাড়ি ছিল। আর ৪ লাখ বাঙালিকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাহাড়ি ও বাঙালিদের জীবনাচরণের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা পরিবেশকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ক্রমাগতভাবে এ অঞ্চলে জনসংখ্যা বাড়ছে। এদের জীবনধারণের ব্যবস্থা কী? এরা মূলত গাছ কাটে, মাছ ধরে।
রাজনৈতিকভাবে বনকে কীভাবে দেখা হবে, সেটা একটা বিষয়। আগের থেকে জুম সাইকেল কমে গেছে। আগে জুম সাইকেল ছিল ১০ বছর। একজন ব্রাজিলিয়ান বিশেষজ্ঞ বলেছেন, জুম সাইকেল হবে ১৫ বছর। এখন এটা কমে এসেছে দুই থেকে তিন বছরে। জুম সাইকেলের ফলে ব্যাপকভাবে মাটির উপরিভাগ ধ্বংস হয়ে যায়। নিচের দিকে খালে চলে যায়। জুমচাষ একটা বড়ো সমস্যা।
এখন এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ফসলের চাষ হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। প্রচুর গাছ পাচার হয়। অসংখ্য আসবাবের দোকান। আসবাব মানেই বন ধ্বংস। পাহাড়ি-বাঙালি সবাই এটা করছি। এ এলাকা থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই লাখ সিএফটি ফার্নিচার চলে যায়।
ফার্নিচারের ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এটা ভীষণ রকমের অনিয়ম। আমার সময় খাগড়াছড়িতে ফার্নিচারের ব্যবসা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু রাঙামাটি ও বান্দরবানে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। পাহাড় রক্ষায় একটা কর্তৃপক্ষ তৈরি করতে হবে। যাদের সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। এত কিছুর পরও খুব আশাবাদী হতে পারছি না যে এসব বন্ধ হবে।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টেন (সেড) নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গাইনফিলিপ গাইন বলেছিলেন-এখন রাঙামাটিতে একটা শহর দেখি। আগে এই শহর ছিল না। পাহাড়ের চূড়ায় এই শহর গড়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন, এমন একটা জায়গায় শহর হতে পারে কি না। পাহাড়ি এলাকায় শহর সাধারণত হয় উপত্যকায়। কাঠমান্ডুর মতো শহরগুলো উপত্যকায়। ওখানে পাহাড়েও কিছু ঘরবাড়ি আছে, কিন্তু সেগুলোর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের পাহাড়গুলো বালু-মাটির পাহাড়।
রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি কিংবা বান্দরবান পর্যন্ত নতুন গ্রাম গড়ে উঠছে। এসব এলাকার আরো অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে। এখন একটা ভূমিধস হয়েছে। অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ভূমিধসের প্রকৃত কারণ সামনে আসছে না।
জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আমরা কতটুকু বিদ্যুৎ পাই? বছরের কত সময় এই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকে? পত্রপত্রিকায় দেখি, অধিকাংশ সময় ওখান থেকে কোনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। ওটার বোধ হয় মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। এখন ভাববার বিষয়, ওখানে আরেকটা বিপর্যয় হবে কি না।
বন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কুড়ি বছর ধরে আমরা ওখানে যাতায়াত করি। লক্ষ করেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা জায়গায় খুব বড় সর্বনাশ হচ্ছে বাঁশ উজাড় করা। বাঁশ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের জীবন কল্পনাই করা যায় না। বাঁশ কিন্তু শেষ হয়ে গেছে।
বাঁশ শেষ হওয়ার পর এখানে বিশাল এলাকা নিয়ে পাল্পউড প্ল্যান্টেশন হচ্ছে। এটার ব্যাপারে কেউ কিন্তু তেমন কথা বলেন না। এর কোথাও কোথাও আবার সেনা ক্যাম্প রয়েছে। এখানে মানুষের জীবন ভীষণ কষ্টকর। বিএফআইডিসির (বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন) ওয়েবসাইটে প্রাকৃতিক বনকে বলা হয়েছে বুশ। তাদের ভাবভঙ্গি হলো এগুলো কেটে ফেলতে হবে। এসব কেটে কিছু প্ল্যান্টেশন তারা করেছে। এটা আসলে কিছুটা পাল্পউডের সঙ্গে রিলেটেড।
সংরক্ষিত বন আর নেই। বান্দরবানের বাইশারিতে চারটা চাকগ্রাম ছিল। ৮-১০ বছর আগে ওই চাকগ্রাম থেকে একটানা ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত হেঁটেছি চামুয়াঝিরির একটা মুরং গ্রামে যাওয়ার জন্য। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বাইশারি থেকে শুরু করে বাদুড়ঝুরি পর্যন্ত প্রচুর রাবার ও তামাকের চাষ করা হয়েছে। এ জন্য উজাড় করা হয়েছে প্রাকৃতিক বন-জঙ্গল। এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।
ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী? শান্তি চুক্তি হয়েছে, এর বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভূমি চুক্তির বাস্তবায়ন করা। এ জন্য পাঁচটি ভূমি কমিশন হয়েছে। সেই কমিশনগুলো দৃশ্যত কিছুই করেনি। এখন একটা বিপর্যয় হয়েছে। সপ্তাহখানেক পরে হয়তো আলোচনাও শেষ হয়ে যাবে। এখানে গণমাধ্যম একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেন এ ধরনের ভূমিধস আর না হয়। আশা করি এ বিষয়ে সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ব্র্যাকের বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানী বিভাগের খ-কালীন শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেছিলেন-রাঙামাটিতে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এই কদিনের পত্রপত্রিকায় যা দেখছি, শুনছি-এভাবেই কিছুটা ধারণা হয়েছে। আজকের সকালবেলা পত্রিকায় কিছু শিশুর নাম দেখলাম। এরা পাহাড়ধসে মারা গেছে। নুরি আকতার, বন্যা চাকমা, জুমজুমি চাকমা, বৃষ্টি। বৃষ্টি বাঙালি না চাকমা এর কোনো উল্লেখ নেই। এত বড়ো একটা ঘটনা, অথচ একে তেমন একটা মানবিকভাবে দেখা হয়নি। কিন্তু এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। আমি বিবিসিসহ বিভিন্ন খবর শুনে থাকি। গতকাল ভাবলাম বাংলাদেশ বেতার কী বলে শুনি। বিবিসি গুরুত্বের সঙ্গে বলেছে, ‘রাঙামাটি এখনো বিচ্ছিন্ন।’ কিন্তু বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটির কোনো খবরই দিল না।
বাংলাদেশ বেতারে রাজনীতিকদের খবর তো আছে। জাপান সাগরে মার্কিন নৌসেনা নিখোঁজ, তাদের খোঁজা হচ্ছে। গ্রেনফেলে সর্বশেষ মৃতের সংখ্যা কত, ওভালে আজ ক্রিকেট খেলা হবে-এমন বিভিন্ন সংবাদ আছে। বিস্মিত হলাম, রাঙামাটির কোনো খবর নেই। যেকোনো বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র মানুষেরা। এদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ও শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে থাকে সবচেয়ে বেশি।
প্রশাসনসহ কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন বড়ো রকমের রাজনৈতিক নেতৃত্বের। কোনো কোনো পত্রিকায় কতজন বাঙালি ও কতজন পাহাড়ি মারা গেল, সেটা উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করছে। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি কারা মারা গেল, সেটা কোনো বিষয়ই না। শেষ পর্যন্ত মানুষ মরেছে এটাই প্রধান।
জুমচাষে হয়তো পাহাড়ের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি অন্যান্য ক্ষতির তুলনায় খুবই কম। কিন্তু ঘুরেফিরে একেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে পাহাড়ধসের প্রকৃত কারণ সব সময় আড়ালে থেকে যায়। পাহাড়িদের মধ্যেও যারা প্রান্তিক, তারা জুম চাষ করে। অথচ আমরা দেখে থাকি, রাস্তা যেখান দিয়ে গেছে, যেখানে শহর-এসব জায়গায় বেশি ভূমিধস হচ্ছে।
আলোচনায় ভূমিধসের আরও অনেক কারণ এসেছে। একসময় আমরা সবকিছু ভুলে যাই। প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পাহাড়ধস থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে।
ব্র্যাকের জলবায়ু ও দুর্যোগ বিভাগের পরিচালক গওহর নঈম বলেছিলেন-বছরের শুরু থেকে যে দুর্যোগগুলো আমরা দেখছি, এর সব কটির পেছনেই দায়ী হলো আমাদের শাসনকার্যের ব্যর্থতা, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা। বলা হচ্ছে, ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ে এ রকম বিপর্যয় হতে পারে। ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবেই, কোনো সময় এর চেয়ে বেশি হবে। আবার কোনো কোনো সময় কম হবে। কিন্তু এই ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির পাশাপাশি যে আমরা পাহাড়ের অবস্থাকে নাজুক করে রেখেছি, সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলছে না। তামাক চাষ প্রথমে আমাদের দেশের রংপুর থেকে শুরু হয়েছিল। রংপুরের বন ধ্বংস করতে করতে কুষ্টিয়া হয়ে এটা এখন পাহাড়ে পৌঁছে গেছে। কারণ ওখানে এখনো অনেক গাছ, যা কেটে তামাক চাষ করা যায়। যেখানে কাটার মতো গাছ নেই, সেখানে তামাকের চাষ হচ্ছে না। তামাক ব্যবসায়ীরা আমাদের চোখের ওপর দিয়ে কাজগুলো করে যাচ্ছেন, আমরা কিছু বলতে পারছি না।
শুধু গাছ ধ্বংস না, এটার সঙ্গে তামাক চাষে যে বিষক্রিয়া ছড়ানো হচ্ছে, তা আমাদের ভূমির সঙ্গে এবং আমাদের পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আমাদের পাহাড়ের এই সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রযুক্তিগত সমাধান এবং রাজনৈতিক সমাধান দুটিই পাশাপাশি চালাতে হবে। এখন যদি বলা হয় যে পাহাড়ের গাছ তো সব ধ্বংস করে ফেলেছি, এখন পাহাড়কে কীভাবে রক্ষা করব? এখনো উপায় আছে।
একটা ভালো প্রস্তাব এসেছে যে পুরো পাহাড়ি অঞ্চলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে গাছ কাটা বন্ধ করা। পাহাড় পাহাড়িরা ভালো চেনে। বাঙালিরা পাহাড় ততটা ভালো চিনবে না বা পাহাড়ের সঙ্গে বসবাস করতে পারবে না। এ কারণেই হয়তো যারা বাইরে থেকে গিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে, তারা পাহাড়ের মাটিকে সমতলের মাটি হিসেবেই ভাবে। আর সে কারণেই দুর্যোগের সময় তাদের ক্ষতিটাও বেশি হয়ে থাকে। পাহাড়ধসের পর যখন উদ্ধারকাজ চলছিল, তখন দেখে খারাপ লেগেছে যে উদ্ধারকর্মীরা কোদাল আর বেলচা দিয়ে মাটি সরাচ্ছে। অথচ আমরা আমাদের ফায়ার ব্রিগেডকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো উন্নত করতে পারতাম। তাহলে হয়তো অনেক মানুষকে আমরা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারতাম, যেটা আমরা পারিনি।
আরেকটা সমাধান হলো, পাহাড়ে যখন প্রকৌশলীরা রাস্তা বানাচ্ছেন, তখন আমাদের ভূতাত্ত্বিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাহাড়ের বিন্যাসকে মাথায় রেখে রাস্তা বানানো উচিত। পাহাড়ের কোনো রাস্তাই যেন ভূতাত্ত্বিকদের পরামর্শ ছাড়া না বানানো হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এবার যতগুলো স্থানে ধস নেমেছে, সবই ছিল পাহাড়ের উত্তর-দক্ষিণমুখী রাস্তার পাশে। এটা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে পাহাড়ের কোথায় সমস্যা আছে। এই পাহাড়ের সমস্যা না বুঝতে পারলে পাহাড় ডিঙানো যাবে না, যেটা আমরা করতে যাচ্ছি।
সমাপ্তিতে মতিউর রহমান বলেছিলেন-পাহাড়ধসের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্য ভূতাত্ত্বিক জরিপ হওয়া প্রয়োজন। পাহাড়ের গাছ কাটা, সড়ক তৈরি, বসতি তৈরি-এমন অনেক কর্মকা-ের ফলে পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে দেওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আশা করি। (সূত্র : পাহাড় ধস-কেন, কী করণীয়, দৈনিক প্রথম আলো ২৩ জুন ২০১৭)
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে পার্বত্য অঞ্চলের ‘ভূমিধ্বস : কারণ ও প্রতিকার’ বিষয়ক দিনব্যাপি একটি সেমিনার সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার ও বেগম ফিরোজা বেমন চিনু বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে ভূমিধ্বস এর কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল ইসলাম, সমন্বিত পর্বত উন্নয়নের আন্তর্জাতিক সংস্থা(ইসিমোড) এর ভূ-তত্ত্ববিদ প্রফেসর সামজাল রতœা বজরাচারিয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল পরিমল বিকাশ চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: কামাল উদ্দিন তালুকদার। পরে উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ১৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে পাহাড় ধ্বসের কারণ হিসেবে পাহাড় কাটা, বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিত আবাসন ও রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত জুম চাষ, অতিবৃষ্টি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে চিহ্নিত করা হয়। এই ভূমিধ্বসের প্রতিকার ও করণীয় হিসেবে আগাম সতর্ক সংকেত, পাহাড় উপযোগী গৃহ নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন, পর্যাপ্ত আশ্রায়ন ব্যবস্থা, ভূমি ব্যবহার নীতিমালা সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষকে এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
সেমিনারে ড. গওহর রিজভী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, শান্তি চুক্তির শর্তমোতাবেক অধিকাংশ সরকারি বিভাগ সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত করা হয়েছে। যার ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তির পূর্ববর্তী সরকারগুলোর অপরিনামদর্শী পদক্ষেপের ফলে ভারসাম্য বিনষ্ট হয় ফলে পাহাড়বাসীকে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের ভূমিধ্বস রোধে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিধ্বসের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ক এ সেমিনারের সার সংক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ এলাকায় টেকসই উন্নয়নে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান। (সূত্র : ভূমিধ্বসের পেছনে মানবসৃষ্ট কারণই মূল অনুঘটক, দৈনিক জনকন্ঠ ২২ আগস্ট ২০১৭)
২০১৮ সালের ১২ জুন রাঙামাটির নান্ন্যেচরে (নানিয়াচর) ভারি বৃষ্টিপাতে কমপক্ষে ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন। ২১ মে ২০১৮ তারিখে বান্দরবনের নাক্ষ্যংছড়িতে ঘুমডুম এলাকায় একটি নালা খুড়তে গিয়ে ভূমিধ্বসে এক নারীসহ তিনজন শ্রমিক নিহত হন। রাঙামাটিতে অনেক এলাকায় যেমন-রিজার্ভ বাজার, উন্নয়ন বোর্ড, পুরাতন বাস স্টেশন, শিমুলতলী, সাপছড়ি, মানিকছড়ি, ডেপ্পোছড়ি, ভেদভেদী ও ঘাগড়ায় এরকম ভূমিধ্বসের খবর জানা যায়। অত্যদিক বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটির ৫টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়।
অনলাইন সংবাদপত্র-হিল ভয়েসে প্রকামি তপ্রতিবেদন মতে, ‘…পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিক ভূমিধ্বস ও মৃত্যু সত্ত্বেও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ভূমিগ্রাসী ও প্রভাবশালী লোকেরা তাদের পাহাড় কাটার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ভূমিগ্রাসীরা তাদের এ অপকর্ম স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে করে থাকে। প্রশাসন অপরাধীদের ধরতে নিষ্ক্রিয়তা দেখায়…।’ (সূত্র : ভূমিধ্বস-পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের যাপিত জীবনে এক আতঙ্ক, অনলাইন সংবাদপত্র-হিল ভয়েস ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯)
পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনযাপন, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বৈচিত্র্যময়। এই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আমাদের মূল্যবান সম্পদ এবং তা লালন ও সংরক্ষণ করা আমাদেরই দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *