মানসিক সেবার কথা জানেনই না ঢাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী


অনলাইন ডেক্সঃ প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১০, ২০২৩, ৩:০৫ অপরাহ্ন /
মানসিক সেবার কথা জানেনই না ঢাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক সেবার বিভিন্ন কার্যক্রম আছে। তবে এসব কার্যক্রম সম্পর্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জানেন না। এত সমস্যার মধ্যে থাকলেও খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী সেবা নিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে সমস্যায় ভুগলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে সেবা নিতে পারেন।

মেয়েদের হলগুলোয় কনসালট্যান্ট আছেন। যেখানে বিনামূল্যে সেবা মেলে। কলা ভবনের পাঁচতলায় ড. নসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপিতেও সেবা দেওয়া হয়। অবশ্য সেখানে প্রতি সেশনে ৮০০ টাকা দিয়ে যে কেউ সেবা নিতে পারেন।

তবে এসব জায়গা থেকে সেবা নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম এবং এই সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন মাত্র ৪৮১ জন শিক্ষার্থী। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা নগণ্য। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গড়ে সেবা নিয়েছেন ৪২৮ জন শিক্ষার্থী।

এই শিক্ষাবর্ষগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গড় শিক্ষার্থী ছিলেন ৪৫ হাজার ৯৫৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক সেবা গ্রহীতার সংখ্যা অনেক কম।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে আটজন জানান, এই সেবার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। ছয়জন জানান, তাঁরা কিছুটা জানেন। বাকি ছয়জন জানান, তাঁরা সেবার বিষয়ে পুরোপুরি অবগত আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের মাহবুব তামিম বলেন, ‘জানি কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কোথায় করায়, যোগাযোগ কিভাবে করে, এসব তথ্য জানা নেই।’

ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হাওলাদার বলেন, ‘ভালোভাবে জানা নেই। আমাদের প্রথম বর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে একটা ম্যাম বলেছিলেন, কাউন্সিলংয়ের ব্যবস্থা আছে। শুধু এতটুকুই জানি।’

ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের উপপরিচালক (কাউন্সিলর) সাইফুন্নেসা জামান বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার আছে। ডাক্তার দেখালে বা কাউন্সিলরের কাছে গেলে মানুষ আমায় পাগল ভাববে এই জন্য অনেকে আসে না। তবু অনেক শিক্ষার্থীই আমাদের এখানে সেবা নিতে আসে।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২০ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ঢাবিতে ২৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ বিষয়ে ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, ‘আত্মহত্যার প্রবণতা মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশি দেখছি আমরা। আমাদের কাছে অনেকেই এসেছিলেন, যাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল। কিন্তু পরে তাঁরা সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের কেউ-ই আমাদের কাছে কখনো সাহায্য নিতে আসেননি। আমাদের কাছে সাহায্য নিতে এলে আমরা তাঁদের সাহায্য করতে পারতাম।’

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় তিনি শিক্ষার্থীদের একে অপরকে সাহায্য করা, শিক্ষার্থীদের ইতস্ততা কাটানো, সচেতনতা সৃষ্টি এবং ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের সেবা নিতে সবাইকে আহবান জানান।

এদিকে মেয়েদের প্রতিটি হলে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ থাকলেও ছেলেদের হলগুলোতে কোনো সাইকোলজিস্ট নিয়োগ নেই। এ বিষয়ে অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, ‘মেয়েদের হলগুলোয় আমাদের সাইকোলজিস্ট আছেন। মেয়েরা তাঁদের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছেলেদের হলে। ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে বেশ কিছু হলে আগে সাইকোলজিস্ট ছিলেন। কিন্তু এখন নেই।’

ছেলেদের হলগুলোতে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ভাবছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘ছেলেদের হলগুলোতে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেব। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। তবে প্রতিটি হলে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।’