সৃজনশীল একচেটিয়া মানে অভিনব কিছু সৃষ্টি করা, নতুন কোনো পণ্য যা লোকজনের জন্য উপকারী সেবা সম্পন্ন করে এবং এর সৃষ্টিকর্তা ভালোভাবে বেঁচে থাকবে তেমন একটি মুনাফা। আর প্রতিযোগিতা মানে কারও জন্য কোনো মুনাফা নেই, পণ্যে পণ্যে কোন পার্থক্য নেই এবং বেঁচে থাকার জন্য পুরো এক সংগ্রাম করতে হয়। তাহলে এরকম অবস্থার পরেও কেন লোকজন প্রতিযোগিতাকে ভালো মনে করে? উত্তরটি হচ্ছে, এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক মতবাদ বা সাধারণ লোকজন ও কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ঝামেলাই নয়; বরং এটা তারচেয়েও বেশি কিছু। প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটি চিন্তারীতি, ভাবাদর্শ – যা আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে এবং আমাদের চিন্তাকে বিকৃত করেছে। আমরা প্রতিযোগিতার কথা প্রচার করেছি, এটার প্রয়োজনীয়তা খুঁজে বের করেছি এবং এর বিধি-নিষেধকে আইনত বিধিবদ্ধ করেছি; এতে করে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ফাঁদে ফেলেছি – যদিও আমরা জানি যে, আমরা যত বেশি প্রতিযোগিতা করব তত কম আমরা পাব।
এ খুব সহজ সরল এক সত্য, তবুও আমরা নিজেদের এমন ভাবে প্রশিক্ষিত করেছি যাতে এই সত্যকে উপেক্ষিত করা যায়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তো পুরোপুরি প্রতিযোগিতার প্রতিফলন এবং সেই দিকেই ছাত্রদের ঠেলে দিচ্ছে। জিপিএ বা গ্রেডিং পদ্ধতি প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বিচার করছে, যারা সর্বোচ্চ নম্বর পায় তাদেরকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে এবং আলাদা চোখে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে ঠিক একই বিষয়, ঠিক একই ভাবে শিখিয়ে যাচ্ছি। স্বতন্ত্র কোনো ছাত্রের মেধা বা বিশেষ কোনো গুণের মূল্যায়ন করছি না। যারা চেয়ার টেবিলে বসে শিখছে না তাদেরকে নিকৃষ্ট চোখে দেখা হচ্ছে। শিশুদেরকে আমরা প্রথাগত নিয়মে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে মেপে যাচ্ছি। শিশুদেরকে আলাদাভাবে বিচার না করে, কেবল তাদের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক মানদণ্ডে বিচার করে যাচ্ছি।
এই সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইন একটি উপযুক্ত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকের মধ্যেই মেধা আছে, প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। কিন্তু আপনি যদি একটি মাছকে তার গাছে ওঠার সামর্থ্য দিয়ে বিবেচনা করেন তবে মাছটি তার সারা জীবন ধরে এই চিন্তা নিয়েই বেঁচে থাকবে যে, সে একটি অক্ষম প্রাণী।’
প্রতিযোগিতার এই খেলা আরও নোংরা হয়ে ওঠে যখন ছাত্রছাত্রীরা উচ্চতর শ্রেণিতে ওঠে। অভিজাত ছাত্ররা আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এমন একটি সাধারণ জায়গায় পৌঁছায় যেখানে তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে, ততক্ষণ তারা নির্বিঘ্নে পড়ালেখা করে যায়। উচ্চতর শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীরা বড় বড় পরিকল্পনা নিয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি তীব্র প্রতিযোগিতা থাকে। ঠিক একই পর্যায়ের ও মেধার ছাত্রদের সাথে নম্বর নিয়ে তীব্র লড়াই হয়। আর এইভাবে প্রথা অনুযায়ী পড়ালেখা করতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অঢেল টাকা খরচ করতে হয় যা অর্থনৈতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তোলে। আমরা কেন নিজেদের সাথেই এমন করছি? এজন্য পড়ুন জিরো টু ওয়ান বই। এখনই জিরো টু ওয়ান বই ক্রয় করুন। বই ক্রয় করতে বাটনের ওপর ক্লিক করুন।
আপনার মতামত লিখুন :