হেল্প করতে এবং আমার কানেকশনের জুনিয়রদের চাকরির ব্যবস্থা করার উছিলা হওয়ায় কিছু সিভি নেয়া শুরু করলাম।
বিস্তারিত পোস্ট দেয়ার পর কয়দিনে অনেক সিভি আসছে। ভাবলাম সিভিগুলো দেখে সব একসাথে করে উনাকে দিয়ে দেই।
একেক করে সিভিগুলো দেখতে গিয়ে চমৎকার কিছু সিভি যেমন পেয়েছি তেমনি এমনও কিছু পেয়েছি যে আমার ইউনিভার্সিটির এমনকি আমার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র অথচ তারপরেও ওই প্রতিষ্ঠানে ফরওয়ার্ড করব দূরে থাক আমার নিজেরই পছন্দ হয়নি।
কারো ছবি ঘোলা, কেউ ছবি দিয়েছে গ্রুপ ফটো থেকে ক্রপ করে, কারো কন্টেন্ট নাই অথচ চার পেইজ, কেউ মেইলে সাবজেক্টই দেয়নি- এরকম নানান রকম ব্যাপার।
আমি যেভাবে দেখেছি অন্য রিক্রুটার সেভাবেই দেখবে। আমি না হয় ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র এবং পরিচিত দেখে যথাসম্ভব ধরে বুঝিয়ে দিব কিন্তু অন্য রিক্রুটারতো এটা করবে না।
ঠিক এই কারনেই অনেকেই শুধু আবেদন করেই যায় কিন্তু শর্টলিস্টেড হয় না। কারন বারবার রিজেক্টেড হয়েও সেই একই সিভি দিয়ে আবার আবেদন করে। সমস্যাটা আর সমাধান হয়না।
এই জায়গাটায় যেটা বরাবরই গ্যাপ সেটা হচ্ছে ওরা প্রপার গাইডলাইন পায়না, কেউ আবার পেলেও মানে না, কেউ আবার বুঝেইনা যে গাইডলাইন দরকার। ফলে শুধু আবেদন করার সংখ্যা বাড়ে কিন্তু ডেভেলপমেন্ট হয় না!
নতুনদের জন্য সহজ তিনটা পরামর্শ দিব-
১. নিজের সিভি/রেজুমি দেখিয়ে অভিজ্ঞ এবং বুঝে এমন কোন সিনিয়র/জুনিয়র/পরিচিত/ বন্ধুর কাছ থেকে ফিডব্যাক নাও এবং ফিডব্যাক অনুযায়ী কাজ করো।
২. সিভি শুধু সুন্দর করে লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘ডেভেলপ’ করো। অর্থাৎ যা যা লিখবা সেই দক্ষতা গুলোও ঠিকঠাক ডেভেলপ করো। কিছু না জেনে শুধু লেখার জন্য লিখো না।
আর যদি লেখার মত উল্লেখযোগ্য নলেজ বা স্কিল না থাকে প্রয়োজনে লিস্ট করে সেগুলো অর্জন করো। নিজের যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি আবার সিভিতে লেখার মত জিনিসও বাড়বে।
৩. যারা এখনো স্টুডেন্ট, মাত্র শুরু করছো বা পাশ করতে অন্তত এক বছর আছে- তোমাদের জন্য একটা উল্টো বুদ্ধি দেই।
উল্টো বুদ্ধি বললাম কারন কাজটা উল্টো দিক থেকে করবা। তুমি ভবিষ্যতে যেই পেশায় বা যেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করতে চাও সেই জায়গায় ডাক পাওয়ার জন্য একটা পারফেক্ট সিভি কেমন হতে পারে বা সিভিতে কী কী নলেজ/স্কিল থাকলে সেটা অনেক আকর্ষণীয় হবে এবং রিক্রুটার দেখামাত্রই শর্টলিস্ট করবে এরকম একটা Future CV/Resume বানাও।
কোন সেক্টরে বা কোথায় ক্যারিয়ার গড়বা সেটা হুট করে না ডিসাইড করে ভেবেচিন্তে এবং প্রপার মেন্টরশীপ নিয়ে তারপর সেট করো এবং একইসাথে ফিউচার সিভিটা রেডি করো।
হ্যা, কিছু না অর্জন করেই আগেই সব লিখে ফেলো। এরপর সামনে যতদিন স্টুডেন্ট থাকবা এরমধ্যে ওই লিস্ট থেকে ধরে ধরে একটা করে নলেজ বা স্কিল অর্জন করবা।
এজন্যই এটা উল্টোদিক থেকে আগানো। তবে এই কাজ করলে তোমার চারটা লাভ:
১। পাশ করার পর তখন সিভি বানানো নিয়ে ভাবা লাগবে না। কারন আগে থেকেই রেডি।
২। জব শুরুর আগে নলেজ/ স্কিল নাই বলে বাদ পড়ার সম্ভাবনা কমবে। কারন ইতোমধ্যে তুমি সেগুলো নিজের মধ্যে ডেভেলপ করেছো।
৩। ইন্টারভিউ বোর্ড কনফিডেন্সের সাথে ফেইস করতে পারবা। যেহেতু ইতোমধ্যে তুমি এতবছর এটা নিয়ে স্টাডি করেছো এবং ইন্ডাস্ট্রি নলেজও হয়েছে। তাই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবা।
৪। এই অগ্রীম করে রাখা সিভিটা তোমার জন্য একটা গাইডলাইন এবং মোটিভেশন হিসেবে কাজ করবে। কারন তোমার উদ্দেশ্য পরিস্কার, প্রয়োজনীয় কী কী জানবা ও শিখবা সেগুলো অলরেডি লিস্টেড তাই ফোকাসও ঠিক থাকবে
সর্বোপরি, এটা তোমার জন্য একটা চেকলিস্ট হিসেবে কাজ করবে। একটা করে নলেজ/ স্কিল ডেভেলপ করবা আর টিক দিবা। যেটা তোমাকে নিত্য নতুন অর্জনের তৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাস দিবে। ইনশাআল্লাহ্!
সবার জন্য শুভকামনা। শুভ হোক আগামির পথ চলা…
লেখক: মামুনূর রশিদ
আপনার মতামত লিখুন :