Visits: 1

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান মাসটি ইবাদতের উর্বর মওসুম। ইবাদতের এ উর্বর সময়কে বান্দা যথাযথ ঐকান্তিকতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে সামান্য সাধনা, ক্ষুদ্র পরিশীলনী ও অনুশীলনী দ্বারা সহজেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা, তারাবি ও অন্যান্য আমল) পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসলিম, হাদিস-৮৯৬৬)।

পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা, তারাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমলের মাত্রা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

নেকির খাতায় জমা হতে থাকে অসংখ্য সওয়াব। রমজানে অন্যান্য আমলের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবেন।

সেহরির সময় পানাহারের জন্য ঘুম থেকে সময়মতো উঠে খানাপিনা শেষ করে বাকি সময়টুকু তাহাজ্জুদে কাটানো যেতে পারে। ইচ্ছা করলেই তাহাজ্জুদের নামাজের আমলটা সহজে করা যায়। একটু আগেভাগে উঠে দু-চার রাকাত নামাজ পড়া তেমন কষ্টের কিছু নয়, কেবলই ইচ্ছার ব্যাপার।

মহিলারাও কাজের ফাঁকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিতে পারেন। তাহলে তাহাজ্জুদ পড়ার একটি অভ্যাসও গড়ে উঠবে।

কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে এ সময় পবিত্র কোরআনে কারিমের তিলাওয়াত করা যেতে পারে। ইস্তেগফার হচ্ছে সাধারণভাবে যে কোনো সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

আল্লাহর কাছে আমরা দিন শেষে অথবা গুনাহ হয়ে যাওয়া মাত্রই ইস্তেগফার করতে পারি। দোয়া ও মোনাজাত হচ্ছে মুমিনের প্রধান হাতিয়ার।

রমজানে যেসব আমলগুলো বেশি বেশি করা দরকার তন্মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তওবাহ-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ অন্যতম।

রমজানে কিয়ামুল লাইল করার কথা আছে। কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের নামাজ। তারাবির নামাজ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে, তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত।

রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। (আহমাদ : ৬৬২৬)।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিব্রাইল (আ.) রমজানে প্রতিরাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। (বুখারি : ১৯০২)।

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মাহে রমজানে এশার নামাজের পর দুই দুই রাকাত করে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর আমল, যা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

হাদিসে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি: হাদিস ২০০৯)।

রমজান আমাদেরকে আল্লাহর রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। এই দশকে আমরা বেশি বেশি করে ইবাদত-বন্দেগী, কোরআন তিলাওয়াত, দান সদকা, তওবা, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এই মাসের যথাযথ হক আদায় করে রোজা, তারাবিহসহ অন্যান্য নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: এহসান বিন মুজাহির, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *