শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ফজরের নামাজের সময় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর পুবাইল গ্রামে। নিহত নজরুল ইসলাম ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বশির মিয়ার পুত্র।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ফজরের নামাজের সময় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর পুবাইল গ্রামে। নিহত নজরুল ইসলাম ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বশির মিয়ার পুত্র।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে গিয়ে নিহতের মা ফাতেমা খাতুনকে (৬৫) বিলাপ করতে দেখা যায়। একটু শান্ত হওয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাতেমা খাতুন জানান, তার চার পুত্র। পুত্রদের মধ্যে পৈত্রিক জমির ভাগাভাগি ও মৃত স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অর্থ দাবি করা নিয়ে দলাদলি রয়েছে। তিনি তার বড় ও তৃতীয় পুত্র যথাক্রমে হুমায়ুন কবীর ও নজরুল ইসলামের সংসারে থাকেন। অন্যদিকে বাকী দুই পুত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শাহীন মিয়া একদলে রয়েছেন। পুত্রদের এসব সমস্যা নিয়ে গ্রামে একাধিক সালিস হয়েছে। কিন্তু সালিসের সিদ্ধান্ত তার দুই পুত্র জাহাঙ্গীর ও শাহীন উপেক্ষা করে আসছেন।
ফাতেমা আরো বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে ঘর নির্মাণের জন্য নজরুল কিছু ইট কেনেন। বাড়িতে আনতে গেলে শাহীন ও জাহাঙ্গীর বাধা দেন। পরে তিনি বাড়িতে প্রবেশের পথে থাকা একটি চারা গাছ কেটে দিয়ে ইটবোঝাই গাড়ি বাড়ির সামনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বৃদ্ধা বলেন, নজরুল ইসলামকে এই সুবিধা করে দেওয়ার ঘটনায় শাহীন ও জাহাঙ্গীর ক্ষুব্ধ হন। পরে তাদের একজন থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন। প্রশ্নের উত্তরে ফাতেমা বলেন, মামলাটি কিসের ছিল তা জানার জন্য নজরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। পরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
উঠানে দাঁড়িয়ে ফাতোমা খাতুন চিৎকার করে বলতে থাকেন, জমিজমা, টাকা-পয়সার জন্য দুই ছেলে মিলে তাদের ভাইকে হত্যা করেছে, তাকে সন্তানহারা করেছে। তিনি এ ঘটনার কঠোর বিচার চান।
নিহতের বাড়ির সামনে ভিড় করা গ্রামবাসীরা বলাবালি করছেন, মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। এমন নিরাপদ জায়গায় নৃশংস খুনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে তা একেবারে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। অথচ খুন করার জন্য মসজিদকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
মসজিদের ইমাম মো. শামীম মিয়া জানান, তিনি সবেমাত্র নামাজ শুরু করেছেন। তার পেছনেই নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীরসহ পাঁচজন মুসল্লি। নামাজ শুরু করার আগ মুহূর্তে জাহাঙ্গীর ও শাহীন মসজিদে প্রবেশ করেন। জাহাঙ্গীর একটি চাপাতি দিয়ে সেজদারত অবস্থায় নজরুল ইসলামের মাথায় প্রথম কোপ দেন। এ অবস্থা দেখে পাশে থাকা বড় ভাই হুমায়ুন কবীর তার ভাই জাহাঙ্গীরকে চেপে ধরে মসজিদের বাইরে সরিয়ে নেন। পরে শাহীন মিয়া চাপাতি দিয়ে নজরুলকে কোপাতে থাকেন এবং মৃত মনে করে পালিয়ে যান। ইমাম আরো জানান, তিনিও নজরুলকে বাঁচাতে গেলে তাকেও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি পীরজাদা মুস্তাসিনুর রহামান বলেন, আসামিরা পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তথ্য সূত্র: kalerkantho
আপনার মতামত লিখুন :