Visits: 66

আবু মো: আব্দুল্লাহ: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আমাদের চারপাশের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পণ্য বা সেবার প্রয়োজনে আমরা যেমন ছুটি কেনাকাটা করতে, তেমনি আমরা দেখি জনজীবন যখন বিপর্যস্ত হয়,ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে।
এর ফলে একজন ব্যবসায়ী যে তার প্রতিষ্ঠানকে সফলতার কোন সীমায় নিয়ে যেতে পারে, তা অনেকেরই ধারণার বাইরে! আজকের লেখায় আমরা জানবো কিভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ের অপ্রত্যাশিত উন্নতি ঘটে।
ব্যবসায়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা কী?
সাধারণত একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমেই চলতে থাকে। একজন ব্যবসায়ীকে মূলত যে কাজগুলো ব্যস্ত রাখে সারাদিন তা হলো –
  1.     পণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল জোগাড় করা 
  2.    কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া
  3.    পণ্য উৎপাদন করা
  4.    প্রচার ও বাজারজাত করা
  5.     ক্রেতার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা
  6.    বিক্রি ও বিক্ৰি-পরবর্তী সেবা দেয়া
  7.   আয় ও ব্যায়ের হিসাব রাখা
এই সমস্ত কাজের বাইরেও একজন ব্যবসায়ীকে সমাজের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় কিছু কাজে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – প্রচন্ড গরমে বিনামূল্যে কিছু খাবার পানি সরবরাহ করা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। এই কাজটি যেমন তৃষ্ণার্ত মানুষকে তার জীবন ধারণকে সহজ করে ঠিক একইভাবে আসে পাশের মানুষজন জানতে পারে একজন ব্যবসায়ীর মহানুভবতা সম্পর্কে। এটাই একজন ব্যবসায়ীর সামাজিক দায়বদ্ধতা। ক্রয় বিক্রয়ের পাশাপাশি নীতিগত ও বিবেকতাড়িত হয়ে সমাজের জন্য যে অতিরিক্ত কাজগুলো করা হয় সেটাই একজন ব্যবসায়ীর পরিচয় ও উন্নতি বাড়িয়ে দেয় বহুগুনে। এখন দেখবো একজন ব্যবসায়ী কী কী উপায়ে সামাজিক দায়বদ্ধ থাকতে পারে।
সামাজিক দায়বদ্ধ থাকার উপায়
একজন ব্যবসায়ী তার প্রচলিত ব্যবসায়িক কাজকর্মের পাশাপাশি নিম্নোক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে নীতিগত ও সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ থাকতে পারে –
  1.    প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ 
  2.    বর্ষাকালে গাছ লাগানো 
  3.     কৃত্রিম বনায়নে অংশগ্রহণ করা 
  4.    প্রতিষ্ঠানে অসুস্থ কর্মীকে সাহায্য করা 
  5.    গর্ভবতী মায়েদের জন্য রেস্টরুম করা 
  6.     কর্মীদের সন্তানের ভালো লেখাপড়ায় প্রণোদনা দেয়া 
  7.    প্রতিষ্ঠানে প্রাকৃতিক আলো বাতাস ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া 
  8.     অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ কমাতে ব্যবস্থা নেয়া
এরকম বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে একজন ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানকে নৈতিক ও সামাজিক কাজে দায়বদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।  তবে হ্যা, একটি ব্যাপার বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় আর তা হলো – এই সব কিছুর জন্যেই প্রয়োজন আলাদা ফান্ড বা অর্থের যোগান। আর এজন্যেই ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন বৃদ্ধির গুরুত্ব অপিরসীম। ব্যবসায়ে প্রতিদিনকার খরচ মিটিয়ে আলাদা ও যথেষ্ট পরিমানে অর্থ থাকলেই এই সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা যায়।
সামাজিক দায়বদ্ধতার ৫টি উপকারিতা
এবারে আমরা দেখবো কী কী উপকারিতা বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় ব্যবসায় যদি সামাজিক দায়বদ্ধ হয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে: 
জনগণের আস্থা অর্জন।
চমৎকার একটি ব্যাপার হচ্ছে – একজন সাধারণ মানুষ যে সচেতনভাবে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভক্ত না, তার চোখে যদি আসে যে গরমের সময় বাস স্টপে বিনামূল্যে একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী এসে অভাবী মানুষদের পানি সরবরাহ করছে, সে যতই বেখেয়ালি থাকুক, ওই প্রতিষ্ঠানের লোগো ও নাম তার মস্তিষ্কে স্থায়ী জায়গা নিয়ে নেবে! একইভাবে প্রচন্ড রোদে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন যদি যাত্রী-ছাউনি পায়, সেটাতেও তাদের অনেক বেশি উপকার হয়। আর এরকম কাজগুলোর মাধ্যমে একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই আস্থার উপকারিতা কী? সেটা হলো – যেসব মানুষ কোনো ব্যবসায়ের সামাজিক ও নৈতিক কাজগুলো দেখে, তারা যখন কেনাকাটার জন্যে বের হয়, ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য আগে না কিনলেও এখন কেনার পরিকল্পনা করে থাকে। কেনাকাটার সময় অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের পণ্য কেনার ব্যাপারে আমরা সবসময় দ্বিধায় থাকি, কিন্তু যখন অপরিচিত হলেও প্রতিষ্ঠানের জনহিতকর কাজগুলোর কথা মনে আসে, তখন আর কোনো দ্বিধা থাকেনা। এভাবেই একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার কল্যানকর কাজ দিয়ে সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজের ব্যবসায়ের মুনাফা বাড়াতে পারে।
কর্মীদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি
এই সামাজিক কাজ গুলো যে সবসময় প্রতিষ্ঠানের বাইরের মানুষের জন্যেই হতে হবে তা নয় কিন্তু। অনেক কাজ রয়েছে যা করা যায় ও করা হয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভেতরের মানুষগুলোর জন্য – যারা সকাল সন্ধ্যা পরিশ্রম করে যায় ব্যবসায়ের চাকা সচল রাখতে।  যখন এই ভেতরের মানুষগুলোর বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবসায়ের মালিকপক্ষ সাথে থাকে, অসুস্থতায় আর্থিক সাহায্য করে, ও কাজের পরিবেশটা উন্নত করে, কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও সন্তুষ্টি বেড়ে যায় অনেকখানি। তখন দেখা যায়, এই সহানুভূতিশীল পরিবেশ ও আচরণ পাওয়ার জন্যে সহজে কর্মীরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চায়না, চাকরি বদল করে। আর যতক্ষণ কাজ করে, মনোযোগ ও ভালোলাগা নিয়ে করে। এর ফলে মালিকপক্ষকে কর্মী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হয়না খুব একটা। উৎপাদন ও বিক্রি বেড়ে যেতে থাকে কর্মীদের সন্তুষ্ট থাকার কারণে।  রোল মডেল হয়ে যাওয়া
যখন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এরকম সামাজিক ও নৈতিক কাজগুলো বাড়তে থাকে, কর্মী ও ক্রেতা উভয়পক্ষই সন্তুষ্ট হয়ে যায় তখন সেই প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় একটি আদর্শ বা রোল মডেল। নিউজ কাভারেজ বেড়ে যায় ও সবার চোখে আকর্ষণের জায়গা নিয়ে নেয় সেই প্রতিষ্ঠান। এই ঈর্ষণীয় অবস্থান সব ব্যবসায়ীই কম বেশি প্রত্যাশা করে কিন্তু বাস্তবে সেখানে সবাই পৌঁছাতে পারেনা।
সহজেই মূলধন বাড়ানো
ব্যবসায় করতে গেলে মূলধন কিন্তু শুধু একবারই প্রয়োজন হয়, তা কিন্তু না! সময়ের সাথে নতুন পণ্য ও নতুন শাখা খুলতে হয় আর তখন নতুন করে আবারো মূলধনের প্রয়োজন হয়। এই মূলধন যোগানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিজনেস প্ল্যান জমা দিতে হয়। যখন দেখা যায় যে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান সামাজিক কর্মকান্ডে সবসময় অংশগ্রহণ করে থাকে, ফান্ড পাওয়ার একটা সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ ফান্ড বা মূলধন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চায় তাদের ফান্ড এমন ব্যক্তিকে দিতে যে সেটার উত্তম ব্যবহার করবে সমাজের মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে।
খরচ বিহীন প্রসার
এই যে সামাজিক দায়বদ্ধতার এত সুন্দর সব প্রতিক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতা, এ সবকিছু কিন্তু সময়ের সাথে বহুগুনে বেড়ে যায়। ধরা যাক, কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক কাজের পরিবেশ তৈরী করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি ফিচার আসলো সংবাদপত্রে, সেখান থেকে সেটি ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে আরেকটি পোস্ট তৈরী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “সফলতার গল্প” হিসেবে প্রকাশ করা হলে সেটি অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।  এভাবে অনেক প্রচার ও প্রসার সম্ভব যার জন্যে কোনো খরচই করতে হলোনা!
এভাবেই দেখা যায় সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক দায়িত্বের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সফলতার শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক , ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *