Visits: 5

লিংকডইন আমাদের সবার কাছেই সুপরিচিত একটি নাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেশাদারদের কমিউনিটি হচ্ছে এই লিংকডইন। জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে কর্পোরেট জগতে ৭৯% নিয়োগকর্তা প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ে লিংকডইনের সহায়তা নেন, কারণ একজন কর্মীর সবগুলো পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানতে লিংকডইনের কোন তুলনা নেই।

এজন্যই বিশ্বজুড়ে ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করে চলেছেন ক্যারিয়ারের অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করে তুলতে। বাংলাদেশেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে লিংকডইনের জনপ্রিয়তা।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক লিংকডইন কিভাবে ব্যবহার করলে আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতিতে সহায়ক হবে : –

১। মানুষ সবার আগে যে জিনিসটি লক্ষ্য করবে তা হচ্ছে আপনার নাম। একটি ভুল অনেকের প্রোফাইলেই দেখা যায় – নাম ঠিকমতো না লেখা। যেমন কারো নাম যদি লেখা হয় ‘MAMUNUR RASHID’ – এভাবে পড়তে কিন্তু আরাম হচ্ছে না।

‘Mamunur Rashid’ আদ্যক্ষর বড় হরফে এবং বাকি অক্ষরগুলো ছোট হরফে – এভাবে পড়তে সহজ হয়। সূক্ষ্ম এই বিষয়টি অনেকে এড়িয়ে যান, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই আপনার যোগাযোগ দক্ষতা, অর্গানাইজেশন, পেশাদারিতা – ইত্যাদি সম্পর্কে একটা ধারণা গড়ে উঠবে।

২। ছাত্রজীবনে লিংকডইন প্রোফাইল খোলা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অনেকেই তাদের প্রোফাইলে ক্লিয়ার করে লিখেন না তিনি কোন বিষয়ের ছাত্র/ছাত্রী বা তার দক্ষতা কিসে।

পরিচয়ে কেবল ‘Student’ না লিখে কোন প্রতিষ্ঠানে, কোন বিষয়ের উপর পড়ছেন, কোন বর্ষে আছেন সেগুলো উল্লেখ করুন, এবং নিয়মিত আপডেট করুন।

৩। ছাত্র/ছাত্রীদের আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকভাবে লেখা আবশ্যক। যেমন কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাহলে প্রোফাইলে ‘Dhaka University’ না লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল নাম ‘University of Dhaka’ লিখতে হবে।

কারণ লিংকডইন একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, এখানে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

৪। ছাত্রজীবনে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না অনেকেরই। এজন্য অনেকেই অভিজ্ঞতার জায়গায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দিয়ে থাকেন। এগুলো মূলত ‘Education’ সেকশনে লেখা উচিত।

অভিজ্ঞতার জায়গাটি একদম খালি না রেখে আপনি কী কী কাজ করেছেন সেগুলো উল্লেখ করুন। অনেকেই কোচিং সেন্টারে পড়ান, ছোটখাটো ইন্টার্নশিপ করেন। এছাড়া অনলাইনে লেখালেখি করা, ভিডিও বানানো, ছবি তোলা ইত্যাদি নানারকম কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে – আপনি এমন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে অভিজ্ঞতার জায়গায় সেগুলো তুলে ধরুন।

৫। এবারে আসা যাক কর্মজীবীদের প্রসঙ্গে। মনে করুন আপনি এ পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, কিন্তু লিংকডইন ফোকাস করবে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানকে – সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠানে আপনি চাকরি করছেন বা করেছেন।

৬। লিংকডইন মানেই যে কেবল পেশাদারি কাজের কথা লিখতে হবে এমন না। মানুষের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ গড়ে তোলা।

তাই প্রোফাইলে আপনার বিভিন্ন গঠনমূলক কথা লিখতে কার্পণ্য করবেন না। যারা আপনার প্রোফাইল পড়ছে তাদের অনেকের সাথেই আপনার শখ মিলে যেতে পারে, সেখান থেকে আপনার সাথে পরিচয়ের আগ্রহও তৈরি হতে পারে।

৭। যোগাযোগের জন্য একটি মাত্র ইমেইল ব্যবহার করুন। অনেকেরই কয়েকটি ফোন নাম্বার/ইমেইল একাউন্ট থাকে। কিন্তু একটি একাউন্ট থাকবে যেখানে আপনাকে সবসময় পাওয়া যাবে।

সেই ইমেইলটি প্রতিনিয়ত চেক করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দ্রুত রিপ্লাই পেলে প্রাপকের মনে আপনার পেশাদারিতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। অনেকে শুধু অফিসে মেইল চেক করেন, বাসায় আসলে বা ছুটির দিনে মেইল চেক করেন না/ রিপ্লাই দেন না। এগুলো অপেশাদারিতার লক্ষণ।

৮। ‘লিংকডইন অ্যানসার’ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান যেখানে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। আপনি সেখানে লগইন করে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেন সেগুলো প্রদান করুন।

৯। প্রসার বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করার বিকল্প নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ গ্রুপই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয় না। লিংকডইনে প্রতি সেকেন্ডে গ্রুপ তৈরি হয়।

তাই সঠিক গ্রুপ নির্ধারণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও এটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাচাই-বাছাই করে আপনার পেশা, দক্ষতা, আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপগুলোয় যোগ দিন।

১০। অনেকেই লিংকডইন ব্যবহার করে থাকে কেবল চাকরি খোজার উদ্দেশ্যে। অথচ প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকলে এভাবে চাকরি পাওয়া দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার।

লিংকডইনকে শুধু চাকরি খোঁজার মাধ্যম হিসেবে না দেখে মানুষের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় মনোযোগী হন, এর সুদূরপ্রসারী উপকার পাবেন।

১১। নিয়মিত বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করুন। আপনার ব্লগ পোস্ট লিংকডইন ফিড এর মাধ্যমে শেয়ার করুন।

১২। কানেকশন তৈরি অনেক বড় একটি দক্ষতা। ফেসবুকে অনেকেই আছেন একদম কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখেন না। কর্পোরেট জগতে এটি বোকামি হিসেবে গণ্য করা হয়। কানেকশন যতো বড়, আপনার ব্যবসার প্রসারও ততোই বাড়বে। বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপে মানুষের সাথে কথা বলুন, পরিচিত হন, লিংকডইনে কানেক্টেড থাকুন।

১৩। ফেসবুকে যেমন পেইজ বা গ্রুপ তৈরি করি আমরা, লিংকডইনেও এরকম ব্যক্তিগত কানেকশন নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা যায়। আপনি আপনার পরিচিতজনদের নিয়ে প্রোফেশনাল টিম গঠন করে নিতে পারেন। এটা আপনার কর্মক্ষেত্রে শক্তি বৃদ্ধি করবে।

১৪। “Elevator pitch” এর নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। মনে করুন এলেভেটরে আপনার বসের সাথে দেখা, মাত্র ৩০ সেকেন্ডের একটি সুবর্ণ সুযোগ নিজেকে উপস্থাপন করার! এটি বেশ কঠিন ব্যাপার, কিন্তু সুযোগটিকে কাজে লাগাতে জানতে হবে।

কারণ নিয়োগকর্তারা আপনার পিছনে দীর্ঘ সময় খরচ করবে না। লিংকডইনের ‘Summary’ ও অনেকটা এলেভেটর পিচের মতোই। খুব সংক্ষেপে ২-১ লাইনের মধ্যে নিজেকে তুলে ধরুন।

ক্যারিয়ারে আপনার লক্ষ্য, কোথায় পৌঁছতে এবং কেন আপনি এর যোগ্য – নিয়োগকর্তাদের মনে সাধারণত যে প্রশ্নগুলো থাকে খুব অল্পকথায় সেগুলোর উত্তর দিয়েই একটি সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় সামারি লিখে ফেলতে পারেন আপনি।

১৫। লিংকডইনের ছবিটি কেমন হবে? ছবির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন, অথচ ছবি দেখেই আপনার সম্পর্কে মানুষের মনে প্রাথমিক ধারণা জন্মাবে। যেহেতু আপনার লিংকডইন প্রোফাইলটি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে – তাই ছবি হওয়া চাই প্রফেশনাল।

কভার ফটোতে এমন ছবি রাখার চেষ্টা করুন যেটি দেখে মানুষ আপনার কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পাবে। যেমন আপনি কোথাও বক্তব্য রাখবার সময় ছবি থাকলে – সেটি দর্শকের মনে ইতিবাচক ছাপ ফেলবে আপনার আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং যোগ্যতা সম্পর্কে।

১৬। লিংকডইন আপনার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারদের কাছ থেকে বিভিন্ন পেশাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সুপারিশ পাবেন। নিয়োগকর্তারা অনেকক্ষেত্রেই ইন্টারভিউর আগে চোখ বুলিয়ে নেন প্রার্থীর লিংকডইন প্রোফাইলে।

১৭। আপনার দক্ষতা গুলোর বিবরণ দেওয়ার সময় বিভিন্ন ‘Key words’ ব্যবহার করুন। চিন্তা করুন আপনার নিয়োগকর্তা কী কী দক্ষতা প্রত্যাশা করবেন আপনার কাছে, সেগুলো কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন।

১৮। ‘Company Buzz’ নামে লিংকডইনের একটি অ্যাপ আছে, সেটি ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপনার কোম্পানি বা আপনার সম্পর্কে মতামত, ধারণা ইত্যাদি।

১৯। সোশাল মিডিয়ায় আপনি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট যেখানেই থাকুন না কেন লিংকডইন প্রোফাইল লিঙ্কটি দিতে ভুলবেন না। এর মাধ্যমে নতুন নতুন মাধ্যম থেকে নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।

২০। সবশেষে নজর দিন আপনার প্রোফাইল কতটা নান্দনিক তার উপর। প্রোফাইলটি পড়তে এবং দেখতে ভালো লাগছে কি? বানান, ব্যাকরণ ইত্যাদি যাচাই করে দেখুন, দীর্ঘ এবং কঠিন বাক্য এড়িয়ে চলুন। তা নাহলে অনেকে বিরক্ত হয়ে পুরোটা না পড়েই আপনার প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এই বিষয় সমূহ ঠিকঠাক মতো করতে পারলে আশাকরি ভালো কিছু করতে পারবেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *